সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। তবুও চোখের জল বেরনো মানা। গলার কাছে উৎকণ্ঠা দলা পাকিয়ে আটকে আছে।তবুও আবেগ দেখানো মানা। চোয়াল শক্ত করে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দিন গোনা। তবুও দেখানো চলবে না মনে জাঁকিয়ে বসেছে ভয়। থমথমে গোটা বাড়ি। ঠিক যেমন গোটা আফগানিস্তান। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে। প্রত্যেক সেকেন্ড যেন একেকটা ঘণ্টা। টেবিলের সামনে ছড়ানো শুকনো কিছু খাবার। খিদে নেই, শরীরে শক্তি নেই। তবুও মন দুর্বল করা যাবে না। ‘এই দেশ তো আমার। এই শহর তো আমার। এখানেই তো বড় হওয়া। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে জীবন বাঁচা। কীভাবে ছাড়ব! না, এখানেই থাকব আমি। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।’ অনর্গল বলে চললেন Afghanistan-এর প্রথম মহিলা মেয়র জরিফা ঘাফারি। (Afghanistan’s first female mayor Zarifa Ghafari )
গোটা আফগানিস্তান এখন তালিবানের দখলে (Taliban)। তালিবান সন্ত্রাসের বিভৎস স্মৃতি নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে উদভ্রান্ত হয়ে ছুটছে সাধারণ মানুষ। গোটা দুনিয়া দেখছে। চলছে তীব্র সমালোচনা। আর এসবের মাঝেই নিজের বাড়িতে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় প্রতিবাদী মুখ জরিফা গাফারি (Zarifa Ghafari )। মাত্র ২৭ বছর বয়সে আফগানিস্তান-এর প্রথম মহিলা মেয়র জরিফা। ২০১৮ সালে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। এখনও চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেসব দিন। তবে এখন চারপাশের এই উগ্রতা দেখে বিশ্মিত। তবুও হেরে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার থেকে মৃত্যুবরণকেই বেছে নিচ্ছেন জরিফা।
[আরও পড়ুন: রক্তে লাল আফগানভূমে Taliban-এর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াল চিন ]
তালিবানের কাবুল দখলের ঠিক তিন সপ্তাহ আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় জরিফা বলেছিলেন, ‘আমি বসে আছি। আমার পরিবারও সঙ্গে রয়েছে। কেউ আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। আমি এভাবেই অপেক্ষা করব। আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে কোথাও যাব না। ওরা আসুক, আমাকে খুন করুক! ‘
সোমবার কাবুলের সম্পূর্ণ দখল চলে গিয়েছে তালিবানের হাতে। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে আমূল পরিবর্তন। বদলে গেল সরকার, পালটে গেল তার নামও। তালিবানদের (Taliban) দখলে আসার পর আফগানিস্তানের (Afghanistan) নতুন সরকারের নাম হতে চলেছে ‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান’। দ্রুতই এই নতুন সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করতে চলেছে জঙ্গিগোষ্ঠী। কাবুলের প্রেসিডেন্ট ভবন দখল করে বসার পর এমনই খবর জানিয়েছে তালিবানদের একাংশ। সূত্রের খবর, প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এমন এক গোষ্ঠীর মাধ্যমেই মিলেছে ‘ইসলামিক এমিরেট অফ আফগানিস্তান’ প্রতিষ্ঠার খবর।