শিলাজিৎ সরকার: আই লিগের রং এবার সাদা-কালো হয়েছে। অবশ্য লিগের ট্রফিটা যে রেড রোডের ধারে তাঁবুতেই আসতে চলেছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আরও আগে। আর তার সঙ্গেই পরের মরশুম নিয়ে পরিকল্পনা ছকে ফেলার কাজটাও শুরু করে দিয়েছিলেন মহামেডান কর্তারা।
আই লিগ জেতার সুবাদে আইএসএলে উত্তরণের ছাড়পত্র প্রায় পেয়েই গিয়েছে মহামেডান। প্রায়, কারণ এখনও ক্লাব লাইসেন্সিংয়ে পাশ করতে হবে তাদের। তার পরই দেশের সেরা লিগে কলকাতার তিন প্রধানের একসঙ্গে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়া। দিন চারেক আগে সাদা-কালো তাঁবু ঘুরে গিয়েছে ফেডারেশনের প্রতিনিধি দল। এ প্রসঙ্গে ক্লাব সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ রাজু বলছিলেন, “ক্লাব লাইসেন্সিংয়ের যাবতীয় শর্তপূরণের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। অনেকদিন ধরেই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। ক্লাব এবং বিনিয়োগকারী সংস্থা একযোগে যাবতীয় কাজ করছে। ফেডারেশনকে ক্লাব লাইন্সেসিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব নথি জমা দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা এসে তা পরীক্ষাও করে গিয়েছেন। আমি নিশ্চিত, আমাদের আইএসএল খেলার পথে ক্লাব লাইসেন্সিং কোনও সমস্যা তৈরি করবে না।”
তবে একটা সমস্যা তো রয়েই যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের। নিয়ম অনুযায়ী, আইএসএলে একটা স্টেডিয়ামকে ঘরের মাঠ হিসাবে দেখাতে পারে সর্বোচ্চ দু’টো দল। অর্থাৎ, একটি স্টেডিয়ামে দু’টোর বেশি দল হোম ম্যাচ আয়োজন করতে পারবে না। এই মুহূর্তে যুবভারতী স্টেডিয়ামে দু’টো দলই খেলে। ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগান- দু’দলেরই ঘরের মাঠ হিসাবে দেখানো হয়েছে সল্টলেকের এই স্টেডিয়ামকেই। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, এখানে আর খেলার সুযোগ পাবে না মহামেডান। তাদের খুঁজে নিতে হবে নতুন ‘ঘর’। অবশ্য টিম ম্যানেজমেন্টও বিশেষ আগ্রহী নয় যুবভারতীতে খেলার জন্য। এক কর্তা বলছিলেন, “যুবভারতীর ভাড়া এমনিতেই অনেকটা বেশি। ওখানে হোম ম্যাচ আয়োজন করার ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি সব ম্যাচেই যুবভারতী পুরো ভর্তি হবে, এমন নয়। ফলে ওখানে খেলতে হলে দলের আর্থিক বোঝা বাড়বে।”
[আরও পড়ুন: ‘এনআরসি-তে মুসলিমদের অত্যাচার করলে জ্বলবে ঠাকুরবাড়ি’, শান্তনুকে হুমকি চিঠি লস্করের!]
এই পরিস্থিতিতে মহামেডানের পছন্দ কিশোরভারতী স্টেডিয়াম। সন্তোষপুরের এই স্টেডিয়ামে খেলা প্রসঙ্গে মহামেডানের বিনিয়োগকারী বাঙ্কারহিলের কর্তা দীপককুমার সিং বলছিলেন, “আমরা কিশোরভারতীতে খেলার বিষয়টিও মাথায় রাখছি। ওখানে যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো। পাশাপাশি গ্যালারির যা মাপ, তাতে প্রতি ম্যাচেই আমাদের সমর্থকরা স্টেডিয়াম ভরাবেন বলে আমরা আশাবাদী। তাই আমরা ওখানে খেলার বিষয়ে আগ্রহী।” সংস্কারের পর নতুন ভাবে চালু হওয়া কিশোরভারতীতে এখন সারাবছরই ফুটবল হয়। বিশেষত ডুরান্ড কাপ ও কলকাতা লিগের বহু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হয় এই মাঠে। আই লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচটা যুবভারতী স্টেডিয়ামে খেলতে চায় মহামেডান। একান্তই সল্টলেকে খেলার সুযোগ না পেলে বিকল্প হিসাবে কিশোরভারতীর কথাও মাথায় আছে তাদের। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামী বছর আইএসএলও এই মাঠেই খেলবে সাদা-কালো শিবির।
অবশ্য আইএসএলের মাপকাঠিতে এখনও যোগ্য নয় কিশোরভারতী। নিয়ম অনুযায়ী, স্টেডিয়ামে বসাতে হবে বাকেট সিট। তৈরি করতে হলে ম্যাচ সম্প্রচারের পরিকাঠামো। এ জন্য রাজ্য সরকারের দিকে তাকিয়ে মহামেডান। এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অতীতে আমাদের আইএসএল খেলার ক্ষেত্রে সবরকম সাহায্যের কথা বলেছেন। আমরা স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টি নিয়েও ওঁদের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি সমস্যা মিটে যাবে।” তবে ভোটের মরশুম হওয়ায় দ্রুত সমস্যা মেটা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট।