সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অভাবনীয় জটিলতা পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভায়। একদিকে রাজ্যের নগরোন্নয়ন ও পুর বিষয়ক বিভাগ পুরবিধি মেনে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছে। দায়িত্ব পেয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জবা মাছোয়াড়। পালটা বিধি মেনে শনিবার পুরপ্রধান নির্বাচন করল বিরোধীরাও। দায়িত্ব পেলেন নির্দল কাউন্সিলর শীলা চট্টোপাধ্যায়। এরপরই বিরোধীদের হুঁশিয়ারি, “পুরপ্রধান হিসেবে শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাজে কেউ বাধা দিলে আদালতে যাব।” উল্লেখ্য, শনিবার কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন নির্দলের কাউন্সিলর সোমনাথ কর্মকার ও শিলা চট্টোপাধ্যায়ের স্বামী কালীপদ চট্টোপাধ্যায়।
গত ১৩ অক্টোবর ঝালদার তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। ১২ আসনের পুরসভার পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর এবং একজন নির্দল কাউন্সিলর মিলিয়ে মোট ছ’জন অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। ঠিক তারপরেই পুরসভায় শাসক দল ছাড়ে তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিলা চট্টোপাধ্যায়। যিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে জিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর দলত্যাগেই বদলে যায় সমীকরণ। ১২ আসনের পুরসভায় বিরোধী কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭। কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায়, পুরসভা হাতছাড়া হতে চলেছে শাসকদলের। পুরপ্রধানের পদ হারাতে চলেছে তৃণমূল। আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণও দেয় বিরোধী শিবির।
[আরও পড়ুন: দফায় দফায় অবরোধ, বাস ভাঙচুর-ইটবৃষ্টি, শুভেন্দুর সভার আগে উত্তপ্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা]
কিন্তু অনাস্থার তলবি সভায় তৃণমূল পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল অপসারিত হওয়ার সাত দিনের মধ্যেই ঘটে যায় নাটক। পুরবিধি অনুযায়ী অনাস্থার তলবি সভার সাত দিনের মধ্যে উপ-পুরপ্রধানকে পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য বৈঠক ডাকতে হয়। অর্থাৎ ২১ নভেম্বর তলবি সভা হওয়ায় ২৮ তারিখ রাত ১২ টা পর্যন্ত তার সময়সীমা ছিল। কিন্তু ওই দিন দুপুরে ঝালদার তৃণমূল উপ পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকার ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন । ফলে জটিলতা তৈরি হয়।
এদিকে ২৯ নভেম্বর তিন বিরোধী কাউন্সিলর পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য ৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ শনিবার দিনক্ষণ ঠিক করেন। সেই মতো এদিন সাত কাউন্সিলরের উপস্থিতি ঝালদার পুরপ্রধান পদে বসলেন শীলা চট্টোপাধ্য়ায়। ইতিমধ্যে রাজ্য়ের তরফে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট ১৯৯৩, সাবসেকশন ৪, অফসেকশন ১৭ বিধি মেনে ‘অস্থায়ী’ চেয়ারম্যান নিয়োগ করে দেয়।
[আরও পড়ুন: কাঁথিতে আজ মেগা ইভেন্ট, অভিষেকের সভা ঘিরে জমাট তৃণমূলের ঐক্য]
এদিন পুলিশি প্রহরার মধ্যেই ঝালদা পুরসভায় পুরপ্রধান নির্বাচন হয়। তাতে ৭-০তে পুরপ্রধান নির্বাচিত হন নির্দল কাউন্সিলর। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো জানিয়েছেন, “বিধি মেনে আমরা আমাদের পুরপ্রধান নিয়োগ করে দিয়েছি। এর পরে যদিও কেউ তাঁর কাজে বাধা দেন তাহলে আদালতে যাব।” সবমিলিয়ে ঝালদা পুরসভায় জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।