সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: শাসকদলের অভ্যন্তরে বিরোধের সুর ক্রমশই চড়ছে। এবার দলে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না, এই অভিযোগে ক্ষোভ উগরে দিলেন দুর্গাপুর (Durgapur) পশ্চিমের বিধায়ক তথা তৃণমূলের শ্রমিক নেতা বিশ্বনাথ পারিয়াল। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কংগ্রেস বিধায়ক। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকেই তৃণমূলের হয়েই যাবতীয় কাজকর্ম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ফলে স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় বলেই পরিচিত তিনি। এছাড়া তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনে জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পারিয়াল। তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ধন্দ যতই থাক, আপাতত রাজনৈতিক মহলের নজর তাঁর সাম্প্রতিকতম মন্তব্যের দিকে।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিধায়ক ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পারিয়াল জানান, “আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি না। যদি শ্রমিক সংগঠনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতাম, তাহলে শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে শ্রমিক স্বার্থ সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারতাম।”
[আরও পড়ুন: বিজেপি কর্মীদের উপর ব্যাপক বোমাবাজি-গুলির অভিযোগ, রণক্ষেত্র খেজুরি, কাঠগড়ায় শাসকদল]
এখানেই থেমে থাকেননি বিশ্বনাথ পারিয়াল। দলীয় নেতৃত্বের একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বিশ্বনাথবাবু বলেন,”যখনই ভাল কোনও কাজ করতে যাচ্ছি, ঠিক তখনই পিছন থেকে টেনে ধরা হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে দল সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। আর দলের নেতৃত্বের একাংশ দুর্গাপুরের সমস্ত কারখানায় শ্রমিক সমস্যাগুলিকে ইচ্ছে করে জিইয়ে রেখে দিচ্ছে, দলে থেকে এই নেতারা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। উচ্চ নেতৃত্বকে সব রিপোর্ট জমা দিয়েছি। এখন সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে সবাই। কারণ, সামনেই নির্বাচন। মাথায় রাখতে হবে সেই কথাও।”
দল সম্পর্কে বিশ্বনাথ পারিয়ালের এই মন্তব্য নিয়ে প্রবল আলোড়ন দুর্গাপুর জুড়ে। তাঁর এই মন্তব্য বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের এই চড়া সুর কি নতুন কোনও রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত?
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপিতে ভাল লাগছে না বাবুলের’, দাবি তৃণমূল বিধায়কের, জবাবে কী বললেন সাংসদ?]
তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারের দিকে তাকালে খানিক চমকাতে হয় বটে। আগাগোড়া তৃণমূলের (TMC) হয়ে কাজ করা এই নেতা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ছেড়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। ভোটে জিতে বাম-কংগ্রেস (Congress MLA) জোটের বিধায়ক হন। ২০১৭ সালের গোড়া থেকে ফের তৃণমূলের হয়ে ময়দানে নামেন এবং আজ পর্যন্ত সেটাই করে চলেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে শিবির বদল করেননি। এই মুহূর্তে দলবদলের আবহাওয়া বুঝেই কি এই ধরনের মন্তব্য করলেন তিনি? তা নিয়ে শাসকদলের অন্দরেও জোর জল্পনা। যদিও সমস্ত বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বনাথবাবু বলেন, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।”