বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: শাঁখের করাত’ অবস্থা সোনিয়া গান্ধীর (Sonia Gandhi)। শরীর চলছে না। এই অবস্থায় ছেলে রাহুল গান্ধী দলের দায়িত্ব নিতে নারাজ। আবার গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে দায়িত্ব দিলে একদিকে দলের অন্দরে বিদ্রোহ চরম আকার নিতে পারে। অন্যদিকে, প্রধান রাজনৈতির প্রতিপক্ষ বিজেপির ‘পরিবারতন্ত্র’ চলছে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগকে মান্যতা দেওয়া হবে। ফলে ছেলে রাহুল (Rahul Gandhi) বা অন্য কেউ নয়। সোনিয়াই ফের অন্তবর্তী সভাপতি হবেন বলে এআইসিসি সূত্রে খবর।
দেড় বছর পর দেশের সাধারণ নির্বাচন। তার আগে অন্য কাউকে সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে সমস্যা বাড়াতে নারাজ দলের ওয়ার্কিং কমিটির সিংহভাগ সদস্য। তাই শেষ মূহূর্তে সোনিয়াকেই আরও একবার দায়িত্ব সামলাতে অনুরোধ জানান হবে বলে এআইসিসি সূত্রে খবর। তবে তাঁর অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। দু’জনের মধ্যে একজন ছিলেন গুলাম নবি আজাদ (Gulam Nabi Azad)। তিনি দলত্যাগ করায় নতুন নেতার খোঁজে কংগ্রেস (Congress)।
তৃতীয়বার মোদিকে মুখ করেই লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নামবে গেরুয়া শিবির। তাঁর বিরুদ্ধে অবিজেপি দলগুলো কাউকে প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে তুলে ধরতে এখনও ব্যর্থ। বিরোধীদের মধ্যে আপ বা টিআরএসের মতো অনেকেই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে নির্বাচন পরবর্তী বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে সক্রিয়। আবার ডিএমকে, সিপিএম বা আরজেডির মতো দলের নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। বিরোধীদের এমন ছন্নছাড়া পরিস্থিতিতে বিজেপি বিরোধিতার রাশ নিজের হাতেই রাখতে চাইছে কংগ্রেস। এক্ষেত্রে সোনিয়া ছাড়া অন্য কাউকে সভাপতির দায়িত্ব দিলে বিরোধী রাশ হাতছাড়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।
[আরও পড়ুন: আজাদের DNA-তে মোদি ঢুকে গিয়েছে, চাপের মুখে বলল কংগ্রেস, দলে আরও ভাঙনের সম্ভাবনা]
সোনিয়া পরবর্তী রাহুলের নাম নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা শুরু হলেও তিনি নিজেই খারিজ করে দেন। তাছাড়াও রাহুলকে নিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতাদের মধ্যে অনেকের ‘অ্যালার্জি’ আছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে বিদেশে যাত্রা ঘরে ও বাইরের নেতাদের না পসন্দ। বিষয়টি সোনিয়ার অজানা নয়। আবার পরবর্তী ক্ষেত্রে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের (Ashok Gehlot) নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হলে তাঁকে নিয়ে দলের অন্দর থেকেই আপত্তি ওঠে। প্রথমত আগামীবছর রাজস্থানের নির্বাচন। সেখানে গেহলটের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আবার তাঁকে দায়িত্ব দিলে এক ব্যক্তি এক পদ নীতিকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার হবেন শচীন পাইলট। সেক্ষেত্রে রাজস্তানে ফের গোষ্ঠীকোন্দল মাথাচাড়া দেবে। ভোটের আগে গেহলট ও পাইলটের লড়াই শুরু হলে তার প্রভাব ভোটবাক্সে পড়তে বাধ্য। তাই কংগ্রেসের ভোট ম্যানেজারদের অধিকাংশই গেহলটকে সভাপতি করার বিরোধী।
এহেন পরিস্থিতিতে অবিজেপি দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার পাশাপাশি বিরোধী রাশ ধরে রাখতে সোনিয়াই সক্ষম। তাই সোনিয়াকেই পুরো সময়ের জন্য সভাপতি রাখার পক্ষেই মত দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের। এছাড়াও সোনিয়াকে সাহায্য করার জন্য দু’জন অভিজ্ঞ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। এই দু’জন হলেন আনন্দ শর্মা ও গুলাম নবি আজাদ। কিন্তু দু’জনেই দলত্যাগ করায় নতুন করে সমস্যায় কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে জয়রাম রমেশ ও চিদম্বরমের মতো অভিজ্ঞদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে এআইসিসি সূত্রে খবর। তবে চলতি মাসে নয়। সভাপতি নির্বাচন হবে অক্টোবরের মাঝামাঝি।