বিক্রম রায়, কোচবিহার: “তুমি বাড়ি না ফিরলে আমি এমন জায়গায় চলে যাব, আর খুঁজেও পাবে না।” অভিশপ্ত বিকানের এক্সপ্রেসে চড়ার আগে মায়ের সঙ্গে শেষ কথোপকথন। অভিমান করে একথাই বলেছিল কোচবিহারের ২ নম্বর ব্লকের কালপানির বাসিন্দা সম্রাট। ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে তাঁর। আর বাড়ি ফেরা হল না বছর সতেরোর ছেলেটার। মৃত্যু মানতে পারছে না তার ভাই। ভেজা চোখে রাতদিন একই কথা বলে চলেছে সে।
সন্তানকে ছেড়ে দূরে থাকতে মন চায় না মায়ের। তেমনই আবার সন্তানও পারে না মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু পেট বড় বালাই। দুমুঠো অন্নের সন্ধানে দিনমজুরের কাজ করতে মন না চাইলেও রাজস্থানে পাড়ি দিয়েছিলেন কোচবিহারের ২ নম্বর ব্লকের কালপানির বাসিন্দা মিনতি কাজরি। এদিকে, মাকে ছাড়া দিনই কাটছিল না বছর সতেরোর ছেলেটার। মাকে বারবার বলেছেন ফিরে এসো। মা-ও ছেলেকে আশ্বাস দিয়েছিলেন অবশ্যই আসবেন। মাকে আনতে ভাইয়ের হাত ধরে রাজস্থানে পাড়ি দিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: সেক্স টয় কিনতে গিয়ে প্রতারকের ফাঁদে পা! লক্ষাধিক টাকা খোয়ালেন জলপাইগুড়ির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক]
কিন্তু তখনও বেতন হাতে পাননি তিনি। তাই তো মন চাইলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি মিনতি। ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সম্রাটকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন তিনি। অভিমান হয়েছিল। তাও মায়ের কথা অমান্য করেননি ছেলে। অভিমানী সম্রাট ভাইকে সঙ্গে নিয়েই ফিরছিলেন। ট্রেনে ওঠার আগে স্টেশনে শেষবার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। অভিমানী ছেলেটা মাকে বলেছিলেন, “তুমি বাড়ি না ফিরলে আমি এমন জায়গায় চলে যাব, আর খুঁজেও পাবে না।”
সম্রাটের ভাই জানায়, এরপর চোখের জল মুছে দাদা ট্রেনে চড়েন। ট্রেনেও মনমরা হয়েই বসেছিলেন সম্রাট। দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর ঠিক কিছুক্ষণ আগেই শৌচালয়ে গিয়েছিলেন যুবক। তারপর আচমকাই ঝাঁকুনি। মুহূর্তের মধ্যেই কিশোর বুঝতে পারে বিকানের এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছে। পায়ে সামান্য চোট পায় সে-ও। তবে দাদাকে প্রথমে খুঁজে পাচ্ছিল না কিশোর। দীর্ঘক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজির পর দাদার প্রাণহীন নিথর দেহের খোঁজ পায় সে। সম্রাটের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুর্ঘটনার খবর দেয় রেলপুলিশ। ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজস্থান থেকে ফিরছেন তাঁর মা। সম্রাটের মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউই। চোখের জলে ভাসছেন আত্মীয় পরিজনেরা।