গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: এক সময় ডাকাতি (Dacoity)করত। এলাকায় পরিচিত ছিল কুখ্যাত ‘আকু ডাকাত’ নামেও। পরে ডাকাতি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরে মোফাজ্জল হক ওরফে আকু। এখন তার পরিচয় ছিল তৃণমূল কর্মী তথা সমাজসেবী হিসেবে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। দুষ্কৃতীদের গুলিতেই প্রাণ গেল তাঁর। এমনকি মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। বসিরহাটের (Basirhat) মাটিয়ায় তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার নেপথ্যে একে একে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা নাগাদ বাইকে চেপে বাড়ির ফিরছিল তৃণমূল (TMC) কর্মী মোফাজ্জল হক। সঙ্গে ছিল তাঁর এক সঙ্গে আলাউদ্দিন। সেসময়ই মাটিয়া থানা এলাকার চাঁপাপুকুর পঞ্চায়েতের রাজাপুর বাজার এলাকায় তাদেরকে ঘিরে ফেলা হয়। এরপর এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। দুজনেই জখম হন। প্রাণে বাঁচতে বাইক চালিয়ে পালান আলাউদ্দিন। কিন্তু গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাইক থেকে পড়ে যান মোফাজ্জল হক। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ঘটনায় রাত থেকে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। খবর পেয়ে দুজনকে উদ্ধার করে বসিরহাট হাসপতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা জানান মোফাজ্জল মৃত। তবে তার সাগরেদ আলাউদ্দিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
[আরও পডুন: গাড়িতে লেখা ‘মহামন্ত্রী, বিজেপি’, তোলা আদায় করতে এসে গুলি–বন্দুক সমেত পুলিশের জালে ৫]
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, পুরনো শত্রুতার জেরেই পরিকল্পনা মাফিক এই হামলা। তবে ঠিক কী কারণে এই হামলা, তার তদন্ত শুরু করেছে মাটিয়া থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, মৃতের শরীরে একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। এছাড়াও তাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। মাথায় ও বুকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির ক্ষত রয়েছে। তাই তদন্তসাপেক্ষে পুলিশ অনুমান করছে, প্রথমে তাঁকে গুলি করা হয়। এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
[আরও পডুন: প্রতিবেশী নাবালিকাকে অশালীন ভিডিও দেখিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা, বালুরঘাটে গ্রেপ্তার সাধু]
পুলিশ এও জানিয়েছে, ডাকাতি থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও পুলিশের খাতায় রেকর্ড ভাল ছিল না আকুর। বাম আমল থেকে এ পর্যন্ত ডাকাতি, খুন, তোলাবাজি, ছিনতাই-সহ অস্ত্র আইনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরেও একটি মামলায় জেলে ছিলেন সে। এছাড়াও মৃত মোফাজ্জলের মাছের ভেরির ব্যবসা ছিল। তাই ভেরি দখলের তত্ত্বও উড়িয়ে দিতে পারছেন না গোয়েন্দারা। অন্যদিকে, নতুন একটি ছেলে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক হিংসার কারণে খুনের তত্ত্বও উড়িয়ে দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। রহস্যের শিকড়ে পৌঁছতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে মৃতের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে। তবে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে এখনও তৃণমূলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।