দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ১৪৫৪ খ্রীস্টাব্দে অর্থাৎ ৫৬৭ বছর আগে কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ি অর্থাৎ বিজেপি নেতা প্রবীর ঘোষালের (Prabir Ghosal) বাড়িতে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। সময় পেরিয়েছে, তবে এখনও সাড়ম্বরে দেবী আরাধনা হয়। তবে পরিবারের সদস্যদের আরজি যেন প্রত্যেকে কোভিড বিধি মেনে শামিল হয় পুজোয়।
প্রাক্তন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ আশুতোষ ঘোষাল স্বপ্নে আদি বাড়ির পিছনে একটি নিম গাছের ডালে নারায়ণকে শিলা রূপে দেখেন। সেই নারায়ণরূপী শিলা উদ্ধারের পর গ্রামের প্রজারা পুজো করার জন্য আশুতোষ বাবুর কাছে আবেদন করেন। এরপর হঠাৎই একদিন গৃহকর্তাকে নরসিংহ মূর্তি দেখা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। মা দুর্গা স্বয়ং তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন যে নারায়ণকে বাহন করে তিনি যেন মায়ের পুজো করেন। স্বপ্নাদেশ অনুসারেই মায়ের মূর্তি বানিয়ে আদি বাড়ির ঠাকুর দালানে ১৪৫৪ থেকে মায়ের পুজো শুরু হয়।
মূর্তির সঙ্গে প্রবীর ঘোষাল।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: প্রতিমা নিরঞ্জনের পরেও পুজো! বারাসতের প্রাচীনতম দুর্গাপুজোর রীতি অবাক করা]
পুজো (Durga Puja 2021) যাতে ধূমধামের সঙ্গে হয় তার জন্য এক সময় ব্রিটিশ সরকার দুই ধাপে ৭৫০ টাকা করে ১৫০০ টাকা দিত। গ্রামের মানুষদের সেই টাকায় পুজোর ক'টা দিন খাওয়ানোর আয়োজন করা হত। পুজোর খরচ ও গ্রামবাসীদের খাইয়েও অনেক টাকা বেঁচে যেত। সেই বেঁচে যাওয়া টাকা ফেরত চলে যেত ট্রেজারিতে। সপ্তমীতে নিরামিষ, অষ্টমীতে খিচুড়ি, নবমী ও দশমীতে ইলিশ মাছ-সহ অন্যান্য সুস্বাদু খাবার পাত পেড়ে সকলে খেতেন।ক'টা দিন ঠাকুরদালানে নাচ গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হত। একসময় বড়ে গোলাম আলী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি এই ঠাকুরদালানকে অলংকৃত করেছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই পুজো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
প্রবীর বাবু জানান, গত বছর সপ্তমী থেকে দশমী চার দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া কাটছাঁট করে দু'দিনে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। এই বছর তাদের পরিবারের মিটিংয়ে সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনও খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না। পুজো উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও হচ্ছে না। পাড়া-প্রতিবেশীরা অনেকেই এই ঘোষাল বাড়িতে অঞ্জলি দিতেন। সেখানেও এবছর বিধি নিষেধ মেনে দশজনের অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘোষাল পরিবারের মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, করোনার তৃতীয় ঢেউ যেন মানুষের জীবনে আঘাত না হানে।