shono
Advertisement
Important Incident

আদানি কাণ্ড থেকে রামমন্দির উদ্বোধন, দেশ কাঁপানো ঘটনাবলি

যে ঘটনাগুলি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূবনে তাৎপর্যপূর্ণ।
Published By: Kishore GhoshPosted: 05:48 PM Dec 26, 2024Updated: 05:48 PM Dec 26, 2024

‘হাসি-কান্না হীরা-পান্না’য় শেষ হচ্ছে আরও একটা বছর। বিগত হতে চলা ২০২৪ সালের সেই আলো-অন্ধকারে বছরভর এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী দেশ, যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে ভূ-ভারত। আসুন ফেরি দেখা যাক সেই সামাজিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলিকে।

Advertisement

রামমন্দির উদ্বোধন: বছরের শুরুতেই গেরুয়া ঝড়ের সাক্ষী হয় ভারত থেকে বিশ্ব। ২০২০ সালের ৫ আগস্ট যে রামমন্দির নির্মাণের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি সেই মন্দিরের উদ্বোধন করেন তিনি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু মন্দিরের মূল নকশা ১৯৮৮ সালে আমেদাবাদের আশিস সোমপুরার তৈরি করেন। ঐতিহ্যবাহী নাগারার আদলে (উত্তর ভারতের মন্দির শৈলী) তৈরি করা হয় অযোধ্যার রামমন্দির। পূর্ব-পশ্চিমে রামমন্দিরের দৈর্ঘ্য ৩৮০ ফুট। চওড়া ২৫০ ফুট। উচ্চতা হল ১৬১ ফুট। অযোধ্যার রামমন্দিরে মোট ৩৯২টি পিলার এবং ৪৪টি দরজা রয়েছে। ২.৭ একর জমিতে রামমন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। রামমন্দির নির্মাণে খরচ পড়েছে মোট ১৮০০ কোটি টাকা। আট ফুটের রামলালার মূর্তি নির্মাণ করেন ভাষ্কর অরুণ যোগীরাজ। রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেলিব্রিটিদের উপস্থিতিতে ধুমধাম করে রামমন্দির উদ্বোধনে খরচ হয় ১০০ কোটি টাকা। বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি ছিল, তড়িঘড়ি রামমন্দির উদ্বোধন করছে মোদি সরকার। উন্নয়নের বদলে মন্দির নির্মাণকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনে জয় চাইছে তারা।

লোকসভা নির্বাচন: রামমন্দির উদ্বোধনের দুমাস পরে ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় ১৯ এপ্রিল, শেষ হয় ১ জুন। মোট সাত দফা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হয় ৪ জুন। ৫৪৩ জন সংসদীয় প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করেন প্রায় ৯৬ কোটি ভোটার। শাসক শিবির এনডিএ জোট ৪০০ পারের স্লোগান দিলেও ২৯৫ আসনে থামে বিজয়রথ। একা বিজেপি জেতে ২৪০ আসনে। যদিও রামমন্দির উদ্বোধনের জোরে, পাকিস্তান বিরোধী হিন্দুত্বের জিগির তুলে বিজেপি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবে বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু 'ফিনিক্স পাখি' হয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট জিতে নেয় ২৩০টি আসন। কংগ্রেস একা ৯৯ আসনে জয়লাভ করেন। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী শক্তি বিজেপিকে উড়িয়ে ২৯ আসনে জয় ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি তথা এনডিএ জোটের আসন সংখ্যা বিগত লোকসভা ভোটের তুলনায় কমলেও 'ম্যাজিক ফিগার' ২৭২ আসন ডিঙিয়ে যাওয়ায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরে গেরুয়া শিবির। প্রধামন্ত্রীর গদি দখলের হ্যাট্রিক করেন নরেন্দ্র মোদি।

বছরভর বিতর্কে আদানি: ২০২৩-এর মতোই এবারও চর্চায় ধনকুবের শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং তাঁর বাণিজ্যিক গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। ২০২৩ সালে ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে ২০২৪-এও চর্চা অব্যাহত। প্রথমত, সেবির বিধিভঙ্গের যে অভিযোগ উঠেছিল আদানির বিরুদ্ধে, শেয়ারের দামে কারচুপির যে অভিযোগ ছিল, কোনওটিকেই মান্যতা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মামলা খারিজ হতেই আদানির গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার পড়তি শেয়ার ফের তালগাছে চড়তে শুরু করে। যদিও কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের একাংশ ‘মোদি-ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ীকে আক্রমণ অব্যাহত রাখে। এর মধ্যেই বছর শেষে আমেরিকার আদালতে গৌতম আদানি, তাঁর ভাইপো সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। নেপথ্যে ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পেতে ভারত সরকারের আধিকারিকদের ২২০০ কোটি টাকারও বেশি ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবের অভিযোগ। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দেয় আদানি গোষ্ঠী। এর মধ্যে বছর শেষে 'অরাজক' বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তি নিয়ে টালাবাহানা চলে আদানি গোষ্ঠীর। বিদ্যুৎ-এর বিলের বকেয়া অর্থ চাইতেই চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা।

ভূস্বর্গে ঐতিহাসিক নির্বাচন: ৩৭০ ধারা পরবর্তী প্রথম বিধানসভা নির্বাচন। এক দশক পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় জম্মু-কাশ্মীরের কুড়িটি জেলার ৯০টি কেন্দ্রে। ১৮ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর দুদফায় ছিল ভোট। ফল ঘোষিত হয় ৪ অক্টোবর। ক্ষমতা দখলে ম্যাজিক ফিগার ছিল ৪৮। বাজিমাত করে ন্যাশনাল কনফারেন্স-কংগ্রেস জোট। ন্যাশনাল কনফারেন্স জয় পায় ৪২টি আসনে। কংগ্রেস ৬টি আসন জয় পায়। বিজেপি ২৯টি আসন জেতে। পিডিপি জেতে ৩টি আসন। অন্যান্য দলগুলি জেতে ১০টি আসন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হন ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর প্রথম নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের অন্ত ছিল না। এর পরেও সন্ত্রাসের ভয়, দুর্গম পার্বত্য উপত্যকার বাধা ডিঙিয়ে ভোট কতটা পড়বে, তা নিয়ে শংসয়ে ছিলেন অনেকে। কিন্তু শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়ে জম্মু ও কাশ্মীরে। বিষয়টিকে গণতন্ত্রের জয় হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক দেশ এক ভোট, অভিন্ন দেওয়ানি ও ওয়াকফ বিল: ২০২৩ সালে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে কমিটি গঠিত হলেও চলতি বছর লোকসভা ভোটের আগে ধুয়ো তোলে মোদি সরকার। ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে গিয়ে একসঙ্গে লোকসভা এবং সবকটি বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ করে আট খণ্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্টটি জমা দিয়েছিল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কমিটি। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মাঝেই গত ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্ট অনুমোদিত হয়। ১৭ ডিসেম্বর লোকসভায় সংসদে পেশ হয় এক দেশ, এক ভোট বিল। যদিও বিল পাশ হয়নি। সেটিকে পাঠানো হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসিতে। 'এক দেশ, এক ভোটে'র মতোই চলতি বছরে অভিন্ন দেওয়নি বিধি নিয়েও সরগরম সংসদ। একদিকে যখন শাসকদল দেশের সকল নাগরিকদের জন্য ধর্মনিরেপক্ষ আইন আনতে বদ্ধপরিকর, অন্যদিকে বিরোধী গোষ্ঠীর বক্তব্য- সংখ্যালঘুদের চাপে ফেলতেই এই আইন আনতে চাইছে মোদি সরকার। অন্যদিকে ২০২৪-এর ৮ আগস্ট সংসদে পেশ হলেও জেপিসিতে আটকে রয়েছে ওয়াকফ বিল।

নির্বাচনী বন্ড 'অসাংবিধানিক': লোকসভা নির্বাচনের মুখে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ‌্য প্রকাশ করেছিল স্টেট ব‌্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে হইচই পড়ে যায়। দেখা যায়--লোকসানে চলা ৩৩টি সংস্থা ৫৭৬ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। এর ৭৫ শতাংশ অর্থ গিয়েছে বিজেপির তহবিলে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ্যে এলে আরও দেখা যায় ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে সবচেয়ে বেশি ৬৯৮৭ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড ভাঙিয়েছে বিজেপি। পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস (১,৩৯৭ কোটি) ও কংগ্রেস (১৩৩৪ কোটি)। শেষ পর্যন্ত লোকসভা ভোটের আগেই ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, নির্বাচনী বন্ড তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনকে লঙ্ঘন করে। উল্লেখ্য, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলির অনুদানে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কত টাকা দিচ্ছিল, তা জানা যেত না। এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছিল একটি মহল। শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয় আত্মগোপন করে রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার পদ্ধতি।

মাওবাদী দমনে সক্রিয় কেন্দ্র: ২০২৬ সালের মার্চের আগেই দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হবে মাওবাদীরা। ২০২৪ সালে একাধিকবার এই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাস্তবেই এবছর মাওবাদী দমনে বিশেষভাবে সক্রিয় হয় পুলিশ, সিআইএএফ এবং সেনা জওয়ানরা। দেশের ৩৮টি জেলায় এখনও সক্রিয় মাওবাদীরা। চলতি বছরে ২৩০ জনের বেশি মাওবাদী নিকেশ হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮১২ জন। আত্মসমর্পণ করেছেন ৭২৩ জন মাওবাদী। অন্যদিকে গত ১০ বছরে মাওবাদীদের হাতে নিহত হয়েছেন ছ'হাজার ৬১৭ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং সাধারণ নাগরিক। তবে সেই হামলার সংখ্যা এখন ৭০ শতাংশ কমেছে। আগামী দিনে মাওবাদকে দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করাই এখন কেন্দ্রের লক্ষ্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু মন্দিরের মূল নকশা ১৯৮৮ সালে আমেদাবাদের আশিস সোমপুরার তৈরি করেন।
  • ৩৭০ ধারা পরবর্তী প্রথম বিধানসভা নির্বাচন।
  • ২০২৬ সালের মার্চের আগেই দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হবে মাওবাদীরা।
Advertisement