সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: প্রতিবেশীকে ভরসা করে চাবি রেখে যাওয়ার ‘শাস্তি’ হাতেনাতে পেলেন মহেশতলা (Maheshtala) থানা এলাকার বাসিন্দা। ওই চাবি নিয়েই পড়শির অনুপস্থিতিতে আলমারির তালা ভেঙে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না চুরির অভিযোগ উঠল দম্পতির বিরুদ্ধে। বাড়ি ফিরে আলমারি ফাঁকা দেখেই সন্দেহ জাগে পরিবারের। থানায় সরাসরি অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় ওই দম্পতি। পুলিশের জেরার মুখে তারা দোষ স্বীকার করেছেন বলে খবর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) মহেশতলা থানার কুড়ি ফুট শরৎপল্লির বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাস। তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেই একই বাড়ির অপর এক ভাড়াটে অভিষেক পণ্ডিত ও দেবিকা পণ্ডিতের সঙ্গে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁদের। একে অপরের কাছে ঘরের চাবি রেখে যেতেন, যাতে প্রয়োজনে বাড়ির অন্য সদস্যদের ঘরে ঢুকতে কোনও অসুবিধা না হয়। বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রী রানু দাস প্রাইভেট টিউশনের জন্য প্রায় প্রতিদিন বাইরে যান। তাই প্রায় নিয়মমাফিকই এই চাবি (Key) রাখার ঘটনা চলত বলে দাবি বিশ্বনাথবাবুর পরিবারের। আর তাতেই ঘটেছে বিপদ।
দিন কয়েক আগে বিশ্বনাথবাবুরা তারকেশ্বর (Tarakeswar) বেড়াতে যান। চাবিটি যথারীতি পড়শি অভিষেক পণ্ডিতের ঘরেই রেখে গিয়েছিলেন। বুধবার বাড়ি ফিরে পণ্ডিত দম্পতির থেকে চাবি নিয়ে ঘরে ঢোকেন তাঁরা। ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র যথাযথভাবে থাকলেও দেখা যায়, আলমারির কাছে একটি সোনার কানের দুল পড়ে রয়েছে। তা দেখেই সন্দেহ হয় তাঁদের। বিশ্বনাথ বাবুর স্ত্রী আলমারির চাবি গোছা বার করে আলমারি খুলে দেখতে পান, তাতে কোনও সোনার গয়না নেই। কিন্তু আলমারি অক্ষত অবস্থায় ছিল। চাবি রাখার জায়গায় চাবিও ছিল। ঘরের দরজাও ভাঙা ছিল না। তাই বিশ্বনাথবাবুর পরিবারের সন্দেহ পড়শি পণ্ডিত দম্পতির উপরেই পড়ে।
[আরও পড়ুন: ‘উনি তো পর্যটক’, সিপিএমের পুরস্কার গ্রহণ করতেই অমর্ত্য সেনকে কটাক্ষ বাবুল সুপ্রিয়র]
বিশ্বনাথবাবু সোজা মহেশতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পণ্ডিত দম্পতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে জিঞ্জিরা ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুজন সাহা পণ্ডিত দম্পতিকে থানায় ডেকে পাঠান। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দম্পতি চুরির ঘটনা স্বীকার বা অস্বীকার করার পরিবর্তে বলেন, দেশের জমি বিক্রি করে চুরি যাওয়া গহনার আনুমানিক মূল্য নয় লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দেওয়ার কথা বলতে থাকেন বারবার। তাতে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে।
[আরও পড়ুন: প্রায় ১ লক্ষ ৯৬৮ কোটি টাকা বকেয়া রাজ্যের, মোদির সঙ্গে বৈঠকে প্রাপ্য হিসেব বুঝিয়ে দিলেন মমতা]
পরবর্তী সময়ে আরও কঠিন জেরার মুখে পড়ে পণ্ডিত দম্পতি চুরির ঘটনা স্বীকার করেন। তাদের আটক করে পুলিশ। সমস্ত গয়না এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধৃতরা জানিয়েছে, যাবতীয় গয়না অভিষেকবাবু বিহারে, তার দেশের বাড়িতে রেখে এসেছে। শুক্রবার অভিযুক্ত অভিষেক পণ্ডিত এবং তার স্ত্রী দেবিকার বিরুদ্ধে চুরির মামলা দায়ের করে মহেশতলা থানা। তাদের ন’মাসের শিশুকন্যা-সহ দু’জনকেই আলিপুর আদালতে পাঠিয়ে তাদের নিজেদের হেফাজতের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।