ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। যে কোনও দিন, যে কোনও মুহূর্তে করোনা প্রতিষেধক টিকা (COVID-19 Vaccine) রাজ্যে চলে আসতে পারে। যে কথা মাথায় রেখে চলতি মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে টিকা মজুতের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলতে বলল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তার মানে কি অতিমারী ধ্বস্ত আবহ দূর করতে আগামী বড়দিনের আগেই বহু প্রতীক্ষিত সঞ্জীবনী ভারতবাসীর নাগালে আসতে চলেছে?
বিস্তারিত ব্যাখ্যা না মিললেও সরকারি মহলের তৎপরতা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যের দাবিদার। পশ্চিমবঙ্গ-সহ এগারোটি রাজ্যে বুধবার করোনা টিকাদানের প্রশিক্ষণপর্ব শুরু হয়েছে, দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্যসংস্থা আইসিএমআরের প্রত্যক্ষ তদারকিতে। প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে কলকাতার স্বাস্থ্য ভবনেও। সেখানে টিকাদানের তালিম নিচ্ছেন অন্তত ৪০ জন চিকিৎসক, যাঁরা এই প্রক্রিয়ায় নোডাল অফিসারের ভূমিকায় থাকবেন। এঁদের মাধ্যমে আমজনতাকে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
[আরও পড়ুন : পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, ছাড়পত্র পেল না সেরাম-ভারত বায়োটেকের করোনা টিকা]
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী এদিন বলেছেন, “যে কোনও সময়ে করোনার টিকা চলে আসতে পারে। সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে প্রশিক্ষণপর্ব সম্পূর্ণ করতে বলা হয়েছে। সে ভাবে কাজ শুরু হল।” স্বাস্থ্যকর্তার আরও দাবি, “দপ্তর তৈরি। ভ্যাকসিন এলেই আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে কাজ শুরু হবে।”
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে রাজ্যে আসছে ২৯টি ওয়াকিং কুলার। এই কুলারেই রাখা হবে বহু প্রতীক্ষিত করোনা ভ্যাকসিন। এক-একটি ওয়াকিং কুলার বা স্টেশনে অন্তত ৪ হাজার লিটার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ সম্ভব। শুরুতে যে ৪০ জন চিকিৎসক টিকা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের তদারকিতেই গোটা রাজ্যে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর। গোটা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বস্তুত, যত দিন এগোচ্ছে, ততই যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে টিকার প্রস্তুতি চলছে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, ভারত বায়োটেক এবং সেরাম ইন্ডিয়ার তৈরি ভ্যাকসিন আসার সম্ভাবনা বেশি। কারণ হিসাবে এক স্বাস্থ্যকর্তা স্পষ্ট জানিয়েছেন, “কোন ভ্যাকসিন আসবে এই বিষয়ে কুলুপ এঁটেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে আলোচনায় এই দু’টি সংস্থার নাম উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের আরেক কর্তার কথায়, স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রস্তুতি বুঝে নিতে আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কয়েকজন আধিকারিক রাজ্যে আসতে পারেন। কোল্ড চেন সিস্টেমে ভ্যাকসিন রাখা হবে।এদিনের প্রশিক্ষণের আগে আইসিএমআরের সঙ্গে একদফা আলোচনা হয় রাজ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। সাব সেন্টার বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের এই কাজে যুক্ত করার বিষয়টিতে সবুজ সংকেত দিয়েছে আইসিএমআর।
[আরও পড়ুন : বিশ্বে প্রথম, ল্যানসেটে টিকার ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা]
পশ্চিমবঙ্গ-সহ উত্তর ও মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ এগারোটি রাজ্যকে এদিন থেকে টিকা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কলকাতা—সহ রাজ্যের সব জেলা হাসপাতালকে প্রস্তুতি শেষ করার জন্য এদিনই স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এদিনই স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ব্লক ভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠিত হবে সংশ্লিষ্ট বিডিওকে মাথায় রেখে। জনস্বাস্থ্য,পূর্ত এবং অন্য দপ্তরের আধিকারিকদের সেই কমিটির সদস্য করা হবে।