বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: লোকসভা ভোটে বঙ্গে কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে জোট করলে পার্টি শীর্ষ নেতৃত্বের আপত্তি করবে না। সোমবার পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসে কার্যত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সবুজ সংকেত দিয়ে গেলেন সিপিএম (CPM) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি জানান, বাংলায় বাম গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করে আশানুরূপ ফল করলে তবেই মোদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব।
যেভাবে ২০০৪ সালে বাজপেয়ী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বাংলা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। এবারও সেই পথ নিতে হবে। বাংলা না পারলে দেশ পারবে না বলেই মনে করেন ইয়েচুরি। সেইসঙ্গে লোকসভা ভোটের পর ইউপিএর মতো বিজেপি বিরোধী জোট গঠন হবে বলে জানান তিনি। সীতারামের সুর ধরেই রাজ্যে বাম গণতান্ত্রিক ধর্মের নিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করতে পার্টি যে উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে তা জানিয়ে দেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেজন্য নভেম্বর মাস থেকে পার্টি ব্যাপক জনসংযোগ অভিযানে নামছে বলে জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: বাবার আপত্তি সত্ত্বেও প্রতিমা গড়ে আরাধনা, অনুব্রতহীন বোলপুরে ‘কেষ্টকালী’ পুজোর আয়োজন কেমন?]
দেড় বছর পর লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু এখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মোদির বিকল্প বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রী মুখ কে হবেন। রাজনৈতিক মহলে চলছে জল্পনা। আবার কেন্দ্রে শাসকদলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে টিপ্পনী। এই প্রশ্নের পালটা ব্যাখ্যা দিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর মতে, বাজপেয়ী সরকারের সময়ও বিজেপির পক্ষ থেকে একই প্রচার চালানো হয়েছিল। কিন্তু ভোটের পর দেশের মানুষ মনমোহন সিংয়ের মতো প্রধানমন্ত্রী পেয়েছিল। এবারও সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারলে বিরোধীদের মধ্যে আলোচনার করে প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে। কারণ বিরোধীদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য অনেকেই আছেন বলে দাবি করেন তিনি।
গত লোকসভার তুলনায় বিরোধীরা অনেক ইতিবাচক জায়গায় রয়েছে বলে দাবি করে সীতারাম জানান, আগামী দেড়বছরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হবে। যেমন বিহারে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশেও বিরোধীরা শক্তি বাড়িয়েছে। ফলে ২৪ এর নির্বাচনে বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করেন ইয়েচুরি। এদিন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরব হন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনের সময় বিরোধীরা কোন প্রতিশ্রুতি দিলে কমিশন জিজ্ঞাসা করে প্রতিশ্রুতি পূরণের অর্থ কোথা থেকে আসবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর থেকে তা জানতে চায় না কমিশন। যেমন হিমাচল প্রদেশে ভোট ঘোষণা হলেও গুজরাটের নির্বাচনের দিনক্ষণ জানানো হয়নি। আসলে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই নির্বাচন কমিশনের এমন অবস্থান বলে দাবি করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘কাছের মানুষ’, মালবাজার পৌঁছেই স্বজনহারা, বিপন্ন পরিবারগুলির কাছে ছুটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী]
আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। পরের বছর লোকসভা। তাই পার্টিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পার্টির বাইরে থাকা বামপন্থী মানুষকে এক জোট করতে হবে বলে জানান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এছাড়াও বামফ্রন্টের অভ্যন্তরে সিপিএম বিরোধী বক্তব্য বা অবস্থান পার্টি যে ভাল চোখে দেখছে না তাও স্পষ্ট করে দেন সেলিম। শরিকদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু সিপিএমের সমালোচনা করে খবরে আসা যায়। রাজ্যের শাসকদলকে বার্তাও দেওয়া যায়। কিন্তু বামপন্থাকে বাঁচানো যায় না। তাই সিপিএম বিরোধী বক্তব্য বন্ধ করার আবেদন জানান সিপিএম রাজ্য সম্পাদক।