সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সময়ের সঙ্গে পা না মেলানোর অভিযোগ সিপিএমে নতুন নয়। অতীতের কম্পিউটার, ইংরেজি বাতিল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান। সিপিএম সবই মেনে নিয়েছে, তবে বড় দেরিতে। এই গয়ংগচ্ছ মানসিকতার ফলও বামেদের ভুগতে হয়েছে প্রতি পদে পদে। লোকসভা নির্বাচনের পর 'শূন্য'তা কাটাতে দলের ভেতরেই দাবি উঠল, গতানুগতিক ধারা ভেঙে এবার পিকের মতো কাউকে দরকার সিপিএমে।
একের পর এক নির্বাচনে দফায় দফায় শূন্য পাওয়া বামেদের সাংগঠনিক দুর্দশা ইতিমধ্যেই বেআব্রু হয়ে পড়েছে। ঘরোয়া আলোচনায় বাম নেতারা মেনে নিচ্ছেন ভোটে জিততে হলে প্রয়োজন রয়েছে বিকল্প ভাবনার। সূত্রের খবর, দলের নেতাদের চাহিদার কথা পৌঁছে গিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও। দেশের বাকি দলগুলির উদাহরণ টেনে সিপিএমের (CPM) এক প্রথমসারির নেতা জানান, 'তৃণমূলের সাফল্যের পিছনে রয়েছে পেশাদার সংস্থা আইপ্যাক। রাহুল গান্ধীর পাশে আছেন সুনীল কানুগলুর মতো মাথা। বিহারে তেজস্বী থেকে উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) সপা সবার সাফল্যের পিছনে রয়েছে পেশাদার সংস্থা। ফলে সাম্প্রতিক সময়ের নিরিখে এই সত্যকে অস্বীকার করা কোনওভাবেই উচিৎ নয়।' যদিও দলের আর্থিক সংকটের প্রসঙ্গ তুলে সে দাবি পুরোপুরি মানতে নারাজ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি জানান, "আমরা পেশাদার সংস্থার খরচ বহন করতে পারব না। তবে পেশাদারিত্ব অবশ্যই বাড়াতে হবে।
[আরও পড়ুন: বন্ধ ৫টি প্ল্যাটফর্ম, বহু লোকাল বাতিলে শিয়ালদহে চরমে যাত্রী ভোগান্তি]
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য পাওয়ার পর, রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের ভোট শতাংশ কিছুটা হলেও বাড়িয়েছিল বামেরা। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বাম-কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয়েছিল এবারের ভোটে হবে ত্রিমুখী লড়াই। কিন্তু বাস্তবে তা সত্যি হয়নি। উলটে সিপিএমের ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে শুধুমাত্র সেলিম ও সুজন জামানত বাঁচাতে পেরেছেন। বাকি সবার জামানত জব্দ হয়েছে। ওদিকে ৫ বারের সাংসদ অধীর চৌধুরী হেরেছেন। এই পরিস্থিতিতে হারের বিশ্লেষণে দলের মধ্যেই উঠে আসছে নিষ্ক্রিয়তার রোগ। অজস্র জায়গায় এজেন্টই দিতে পারেনি সিপিএম। অথচ বুথ স্তরের কর্মীরা দাবি করেছেন তাঁদের এজেন্ট বসানোর শক্তি রয়েছে বুথে বুথে। নিচুতলার এই পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কাঠামোতে বিরাট বদলের দাবি তুলছেন দলের নেতারা। শুধু তাই নয়, শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে অনেকেই বলছেন, 'পার্টির সবার আগে যেটা দরকার তা হল বিলম্বিত বোধদয়ের রোগ। সেটা আগে সারাতে হবে। সময় পাল্টাচ্ছে, সময়ের সঙ্গে ভাবনাও পাল্টাচ্ছে। অথচ দল আজও পড়ে রয়েছে ধ্রুপদী চিন্তা ভাবনায়।'
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বেহাল অবস্থার পর প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাককে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। নিচুতলার কর্মীদের যে কাজ দলের তরফে দেওয়া হত আইপ্যাকের কর্মীরা তা বুঝে নিত একেবারে কড়ায় গণ্ডায়। সমস্ত দলীয় কাজকর্ম ছিল আতসকাঁচের তলায়। দলে এ নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ থাকলেও তাঁকে গুরুত্ব দেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। যার সুফল, সেই ২০২১ থেকে ২০২৪, বঙ্গ রাজনীতির মাটিতে টানা সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। ফলে লাগাম ছাড়া ভঙ্গুর একটা দলকে একটা ধাঁচে দাঁড় করাতে পেশাদার সংস্থার প্রয়োজনিয়তা কতখানি এখনও যদি দল তা না বোঝে তাহলে একদিন দলটাই উঠে যাবে বাংলা থেকে। এমনটাই মনে করছেন দলের নেতৃত্বরা। শুধু তাই নয় দলের নেতাকর্মীদের সোশাল মিডিয়া ব্যবহারেও লাগাম টানার দাবি উঠছে।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নামে ফ্রি রিচার্জের প্রলোভন! ফাঁদে পা দিলেই নিমেষে ফাঁকা অ্যাকাউন্ট]
দলেরই এক নেতা বলেন, 'ভোট গণনার দিন সকালে যে নেতা পোস্ট করেছিলেন 'লাল আবির মেখে ফিরব'। জামানত খুইয়ে তিনিই পোস্ট করছেন, 'লক্ষ্মীর ভান্ডারের হাজার টাকায় বাংলা বিকিয়ে গেল। বাঙালি ভিখারি হল।' অথচ দলের নেতা বা কর্মী বেশিরভাগেরই এই বোধটুকু নেই যে সামাজিক প্রকল্প কখনও ভিক্ষা হতে পারে না। বাংলার জনগণকে এই ধরনের আক্রমণ শানিয়েই আসলে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে দল।' দলের মধ্যেই দাবি করা হচ্ছে, এই অবস্থার অবিলম্বে পরিবর্তন দরকার। আর সে জন্য প্রয়োজন পিকের মতো পেশাদার সংস্থার সাহায্য। উল্লেখ্য, ভোট বিপর্যয়ের পর শনিবার প্রথম বৈঠকে বসতে চলেছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। এরপর দিল্লিতেও রয়েছে পলিটব্যুরোর বৈঠক। সেখানে এই বিষয়ে প্রস্তাব আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।