সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রাথমিকের টেট কেলেঙ্কারিতে (TET scam) এবার সরাসরি সিপিএম যোগ। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যে ২৬৯ জন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বরখাস্ত হয়েছেন তার মধ্যে রয়েছেন কালনার পোড়খাওয়া সিপিএম নেতা বীরেন্দ্রনাথ বসুমল্লিকের মেয়ে বৈশাখী বসুমল্লিক। বৈশাখীর বাবা বাম জমানায় দীর্ঘদিন কালনা পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর ছিলেন। সিপিএমের (CPM) প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র জেলার শীর্ষ নেতাও ছিলেন তিনি। বাম জমানায় অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদস্যও ছিলেন বীরেনবাবু।
এদিকে বৈশাখীর স্বামী শুভাশিস সরকার (ডাক নাম বাঘা) ২০১৫ সালে কালনার পুরসভার ১৬ ওয়ার্ডে সিপিএম প্রার্থী হয়েছিলেন। বৈশাখীর মা-ও গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী। কালনার জনশ্রুতি, বসুমল্লিক পরিবারে এমন কেউ নেই যিনি সরকারি চাকরি পাননি। এবার আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট, কোন জাদুবলে সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন এই পরিবারের সদস্য বৈশাখী বসুমল্লিক। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে রাজনৈতিক মহলে।
[আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশে শিক্ষিকা প্রেমিকা বরখাস্ত হতেই বিয়ে ভাঙলেন প্রেমিক! ধরনায় তরুণী]
গত ১৩ জুন ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ প্রাইমারি এডুকেশনের সচিব আর সি বাগচি পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে মোট ১৭ জন প্রাথমিক শিক্ষককে বরখাস্ত করার কথা জানিয়েছেন। হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই তালিকায় দ্বিতীয় নামটি রয়েছে বৈশাখীর। সেই তালিকাতেই উল্লেখ রয়েছে, বৈশাখীর প্রাপ্ত নম্বর ৩৩.৬৪৯। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কালনার ধাপাসপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছিলেন বৈশাখী। এছাড়াও এই ১৭ জনের তালিকায় নাম রয়েছে অমৃতা ঘোষ, প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য, নির্মাল্য পাল, সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়, অপূর্ব মাইতি, মিঠু রায়, রুণু দাঁ, মধুরিমা মজুমদার, শুভাশিস ঘোষ, সুদীপ পালিত, পাপিয়া রায়, অভিজিৎ দত্ত, প্রবীর বিশ্বাস, মহম্মদ শামিম, পিন্টু মাইতি ও মিরশাদ আলির।
মঙ্গলবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান তথা মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “হাই কোর্টের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল ইন্সপেক্টরদের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নির্দেশিকার কথা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।” তিনি নিজেও এই বিষয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন। সিপিএম নেতার মেয়ের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া প্রসঙ্গে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। মধুসূদনবাবু বলেন, “বিষয়টি হাই কোর্টের বিচারাধীন। তাই এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।”
[আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে বর্ষা, বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলবে আগামী চার-পাঁচ দিন]
বৈশাখী বা তাঁর পরিবারের কেউই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর স্বামী শুভাশিস সরকার এদিন ফোনে বলেন, “আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। আর কোনও মন্তব্যও করতে চাই না।” তবে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে সিপিএমই প্রাথমিকের দুর্নীতিতে জড়িত।” সিপিএমের কালনা এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমই এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যারা চাকরি দিয়েছে তারাই বলতে পারবে কীভাবে চাকরি দিয়েছে। হাই কোর্ট রায় দিয়েছে বরখাস্ত করার। দুর্নীতি করেছে বলেই এমন নির্দেশ দিয়েছে।” তিনি দাবি করেন, যাঁরা টাকা নিয়ে এই দুর্নীতি করেছেন তাঁদেরও জেলে ভরা দরকার।