বোরিয়া মজুমদার: চেন্নাইয়ে আজ মহারণ। বিশ্বকাপের যুদ্ধ শুরু করতে চলেছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। তার আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক।
প্রশ্ন: ২০১১-র পর এবার আবার ভারত বিশ্বকাপের (ICC World Cup) আয়োজক। সেবার প্রথম আয়োজক দেশ হিসাবে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল। তার পর আপনারা, অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯-এ ইংল্যান্ড। এবার কী হবে বলে মনে হচ্ছে?
ক্লার্ক: অবশ্যই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে ভারত হট ফেভারিট। ভারতীয় দলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট, হোম অ্যাডভান্টেজ। রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma) নিজেদের দেশের মাটিতে খেলবে। বিশ্বকাপ জিততে গেলে বাকি দলগুলোকে ভারতের বাধা পেরোতে হবে। তাছাড়া এই ভারতীয় দলে বিরাট কোহলি, রোহিত, জসপ্রীত বুমরাহর (Jasprit Bumrah) মতো প্লেয়াররা আছে, যাদের কাছে নিজেদের মেলে ধরার আদর্শ মঞ্চ হল এই বিশ্বকাপ। তাই ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলে আমি বিন্দুমাত্র আশ্চর্য হব না।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া? আপনার নিজের দেশও তো বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ফেভারিট। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে কাপ অভিযান শুরু করতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া (Australia)। কতটা সম্ভাবনা দেখছেন প্যাট কামিন্সদের নিয়ে?
ক্লার্ক: বিশ্বকাপ জিততে গেলে ভারতকেও অনেকগুলো কঠিন হার্ডল পেরোতে হবে। তার প্রথমটাই হল অস্ট্রেলিয়া। দু’টো দলের মধ্যে অনেক মিল। দু’দলের মধ্যে ভারসাম্য দুর্দান্ত। ঘরের মাঠে ভারতের সাফল্য প্রশ্নাতীত। ভারতীয় দলের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাপার হল, টিমের প্রথম এগারোয় যারা নিয়মিত নয়, তারাও ফর্মে রয়েছে। ফলে বেস্ট ইলেভেন বাছাই করা এখন সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। একই অবস্থা অস্ট্রেলিয়ারও। তবে ফর্ম নয়, অস্ট্রেলিয়ার সামনে ফ্যাক্টর দলের চোট আঘাত সমস্যা। সঙ্গে অফফর্মও চিন্তায় রাখবে কামিন্সদের। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে জিতলেও তার আগে পাঁচটা ওডিআই হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। যে ব্র্যান্ড অফ ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া অভ্যস্ত, সেটা খুঁজে পাচ্ছি না। টিমের প্রথম একাদশ বাছাই নিয়েও ধোঁয়াশা প্রচুর। ফলে প্রথম ম্যাচে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে সামলানো কঠিন হবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য।
[আরও পড়ুন: ‘গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করব’, হুঙ্কার নেতানিয়াহুর! হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষে মৃত পাঁচশোর বেশি]
প্রশ্ন: জশপ্রীত বুমরাহ এবং কুলদীপ যাদব, দুজন কতটা ফ্যাক্টর এবারের বিশ্বকাপে?
ক্লার্ক: বুমরাহ আর কুলদীপ হল ভারতীয় বোলিংয়ের দুই সেরা অস্ত্র। বিশ্বকাপ জিততে গেলে রোহিতকে ওদের দু’জনকে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে হবে। বুমরাহ এবং কুলদীপ-দুজনেই পরীক্ষিত। বুমরাহ জিনিয়াস। ওকে ঘিরে যে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা সেটা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পূরণ করতে ও মরিয়া থাকবে। নিজের দিনে বুমরাহ কী করতে পারে, আমরা সবাই জানি। ওর হাতে অপশনও প্রচুর। শুধু ইয়র্কার নয়, স্লো বল, পেস বৈচিত্রে ও ডেথ ওভারে ভয়ংকর। পর্যাপ্ত হোমওয়ার্ক ছাড়া বুমরাহর বিরুদ্ধে সফল হওয়া কঠিন। আশা করব, কামিন্সরা সেটা মাথায় রাখবে। আর কুলদীপ? পারফেক্ট ম্যান উইনার। ভারতীয় উইকেটে স্পিন একটা বড় ফ্যাক্টর। বিশ্বকাপ জিততে হলে অশ্বিন (Ravi Ashwin), কুলদীপদের মতো বিশ্বমানের স্পিনারদের বিরুদ্ধে সফল হতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে।
প্রশ্ন: বিরাট কোহলির কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছেন?
ক্লার্ক: বিশ্বাস করুন, মনেপ্রাণে চাই বিরাট (Virat Kohli) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটায় শূন্য করুক। ফাইনালেও তাই। সেখানেও প্রতিপক্ষ যেন অস্ট্রেলিয়াই হয়। বাকি ম্যাচগুলো সেঞ্চুরি বন্যা বইয়ে দিক, আমার আপত্তি নেই (হাসি)। দেখুন, বিরাটের মতো চেজমাস্টার ক্রিকেটে এর আগে আসেনি। ভবিষ্যতেও আসবে কিনা আমরা জানি না। তাছাড়া অফফর্ম কাটিয়ে পুরনো বিরাট ফিরে এসেছে। জানতাম, ও কামব্যাক করবে। বিরাটের এই ফর্মে ফিরে আসাটা ভারতের জন্য বিশাল ইতিবাচক দিক। আর বিপক্ষ বোলারদের ঘুম উড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এবারের বিশ্বকাপ বিরাটের হলে আমি অন্তত অবাক হব না।
[আরও পড়ুন: ফিরহাদের পর মদন মিত্রের বাড়িতেও CBI হানা]
প্রশ্ন: রোহিত শর্মা?
ক্লার্ক: রোহিতকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন শুনতে পাই। তবে আমি ওর নেতৃত্বের ভক্ত। ওর গেম রিডিং দক্ষতা অসাধারণ। দলের হয়ে ওপেন করে বলে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটাও ওর সামনে বেশি। ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের ভাগ্য কোহলির মতো অনেকটাই নির্ভর করবে রোহিত ব্যাট হাতে কেমন পারফর্ম করে, তার উপর। আর যে কন্ডিশনে খেলা হচ্ছে, সেটা রোহিতের জন্য উপযুক্ত। কে বলতে পারে, এই বিশ্বকাপে রোহিত আবারও ডাবল সেঞ্চুরি করবে না।