সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইডেন টেস্টকেও হার মানাল পারথ। সেখানে অ্যাশেজ সিরিজের (Ashes Test) প্রথম টেস্টে শেষ হল দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই। প্রথম দিন সব মিলিয়ে পড়েছিল ১৯ উইকেট। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ১৩২ রানে শেষ হওয়ায় ৪০ রানের লিড পায় ইংল্যান্ড। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অজি বোলারদের গতির আগুনে মাত্র ১৬৪ রানে শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ড। ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ট্রাভিস হেডের সাইক্লোনিক ইনিংসে ভর করে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৯ উইকেটে ১২৩। শনিবার শুরুতেই ব্রাইডন কার্সের বলে সাজঘরে ফেরেন নাথান লায়নকে (৪)। বেন স্টোকসও নিলেন ২৩ রানে ৫ উইকেট। ব্রাইডন ৩টি এবং আর্চারের শিকার ২ উইকেট। তবে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবিধা কাজে লাগাতে পারল না ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে কেবল স্টোকস নন, জ্বলে উঠলেন স্কট বোল্যান্ড, ব্রেন্ডন ডগেটরাও।
অজি পেসার ত্রয়ীর বোলিং দাপটে ইংল্যান্ডের 'বাজবল' ক্রিকেটের অহংকার গুঁড়িয়ে গেল মাত্র ১৬৪ রানে। সর্বোচ্চ ৩৭ রান করলেন গাস অ্যাটকিনসন। জ্যাক ক্রলি ওপেন নেমে দ্বিতীয় ইনিংসেও শূন্যে ফিরলেন। বাঁদিকে ডাইভ দিয়ে যেভাবে রিটার্ন ক্যাচ নিলেন স্টার্ক, তা নিয়ে চর্চা চলছে। তবে দ্বিতীয় উইকেটে লড়াই চালালেন বেন ডাকেট এবং অলি পোপ। ডাকেটকে (২৮) ফিরিয়ে ৬৫ রানের জুটি ভাঙলেন বোল্যান্ড। দু'ওভারের মধ্যে আউট পোপ (৩৩)। আবারও উইকেট বোল্যান্ডের।
রান পেলেন না জো রুট (৮), হ্যারি ব্রুক (০), স্টোকসরা (২)। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে নজিরও গড়লেন স্টার্ক। প্রথম অজি পেসার হিসাবে ৩৫ বছর পরে অ্যাশেজের কোনও ম্যাচে দুই ইনিংস মিলয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন তিনি। ১৯৯০-৯১ সালে ক্রেগ ম্যাকডারমট এমন নজির গড়েছিলেন। সব মিলিয়ে স্টার্কের শিকার ২৪.৫ ওভারে ৭৮ রানে ১০ উইকেট।
২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একেবারে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট করল অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২৮.২ ওভারে ২ উইকেটে হারিয়ে জয়ের রান তুলে নিল অজিবাহিনী। মনে রাখতে হবে, পারথের এই পিচেই পেসারদের বাগে আনতে হিমশিম খেয়েছেন ব্যাটাররা। সেখানে পাঁচ সেশনের তিনটি ইনিংসে ১১৩ ওভারে ৩০ উইকেট পড়েছিল ৪৬৮ রানে। পেসারদের 'বধ্যভূমি' পারথের এই ২২ গজে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করলেন ট্রাভিস হেড। একই সঙ্গে দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮৩ বলে ১২৩ রানে যখন থামলেন, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বোর্ডে ১৯২ রান। প্রসঙ্গত, টেস্টে সাধারণত ওপেন করেন না হেড। শনিবার নিয়মিত ওপেনার উসমান খোয়াজা অস্বস্তি বোধ করায় ওপেনে পাঠানো হয় হেডকে। এক্ষেত্রে অজি টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করতেই হয়। ওপেন নেমে ম্যাচ জেতানোর সঙ্গে নজিরও গড়েন। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও ব্যাটার চতুর্থ ইনিংসে ৭০ বলেরও কম সময়ে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। তাছাড়াও অ্যাশেজের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানের নজিরও গড়েছেন অজি ব্যাটার।
৪৯ বলে ৫১ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দিয়েছেন মার্নাস লাবুশানেও। প্রথম টেস্ট জিতে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। ১০৪ বছর পর অ্যাশেজের কোনও টেস্ট দু'দিনের মধ্যে শেষ হল। ১৯২১ সালের মে মাসে নটিংহামে অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে জয় পেয়েছিল মাত্র দু'দিনে। উল্লেখ্য, ইডেন টেস্ট জিততে চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ রান দরকার ছিল ভারতের। কিন্তু সেই পুঁচকে রান তুলতে পারেননি পন্থরা। উলটে ৯৩ অলআউট হয়ে যায়। মাত্র আড়াই দিনে ৩০ রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। এরপর ক্রিকেটের নন্দনকাননের উইকেট নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছিল, আড়াই দিনে খেলা শেষ হলে টেস্ট ক্রিকেটের মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের যবনিকা পড়ল দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে। তাই ভারতের পিচকে 'ছুঁৎমার্গ'-এর নজরে দেখেন যাঁরা, এখন তাঁরা কোথায়?
