রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ইডেন টেস্টে নামার আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্রেফ সমীহ-সম্মান নয়, যথেষ্ট জাঁদরেল প্রতিপক্ষের মর্যাদা দিচ্ছে গৌতম গম্ভীরের ভারত (India vs South Africa)। ব্যাটিং। পেস বোলিং। স্পিন বোলিং। প্রত্যেক বিভাগকে লৌহ-নিশ্ছিদ্র করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। যাতে সামান্যতম ছিদ্র ব্যবহার না করে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে জাঁকিয়ে না বসতে পারে। আর তা করা উচিতও। কারণ, ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে সফরকারী দলগুলোর মধ্যে বাভুমার দক্ষিণ আফ্রিকাই সবচেয়ে বেশি ব্যালান্সড। তাদের দলে মার্করাম-ব্রেভিস-স্টবস-রিকেলটনের মতো ব্যাটার রয়েছে। করভিন বশ-মার্কো জানসেনের মতো অলরাউন্ডার রয়েছে। কাগিসো রাবাডার মতো পেসার রয়েছে। কেশব মহারাজ-সেনুরুন মুথুস্বামী-সাইমন হারমারের মতো স্পিনার রয়েছে। এ হেন প্রতিপক্ষ নিয়ে ভারত দুশ্চিন্তায় না পড়লে, আর পড়বে কাকে নিয়ে?
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে টিম ইন্ডিয়ার সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশাখাতে বলেও গেলেন, "চার-চারজন স্পিনার রয়েছে ওদের। সম্ভবত, তিন জনকে খেলাবে। অনেকটা উপমহাদেশীয় টিমের বিরুদ্ধে খেলার মতো হবে ব্যাপারটা।" তা ছাড়া ধরা যাক, ইডেন বাইশ গজ। তা নিয়েও যে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হতে পারছে না গম্ভীরের ভারত। এ নিয়ে পরপর দু'দিন পিচ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা গেল গৌতম গম্ভীর-সীতাংশু কোটাককে। কখনও আবার তাঁদের সঙ্গে জুড়ে গেলেন অধিনায়ক গিল। কখনও রবীন্দ্র জাদেজা গিল মাঠে এসেই ইডেন কিউরেটর সুজনের সঙ্গে কথা বলতে চলে যান। ভারতের প্র্যাকটিসের শেষের দিকে ফের সুজন-গম্ভীর একপ্রস্থ কথাবার্তা চলে। ভারতের সহকারী কোচ এ দিন বলে গেলেন যে, "ভালো টেস্ট উইকেটই মনে হচ্ছে। প্রথম দু'একদিন ব্যাটারদের সত্যিই ভালো ব্যাট করতে হবে। কারণ, সেই সময় তুলনায় সহজ হবে ব্যাটিং। কিন্তু আমর মনে হয়, ইডেন টেস্টে স্পিন পরের দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।"
রায়ান টেন যেটা বললেন না, তা হল ভারতীয় টিমের দাবিদাওয়া। এটা এতদিনে সর্বজনবিদিত, গম্ভীররা ইডেনে টার্ন চাইছেন। কারও কারও মতে, সেটা নাকি প্রথম দিন থেকে চাইছে ভারত। পিচে যাতে জল কম দেওয়া হয়, যাতে তা শুকনো থাকে (তাতে বল বেশি ঘুরবে), সেই সংক্রান্ত অর্জিও পেশ করা হয়েছে। কিন্তু ইডেন মাঠকর্মীদের কেউ কেউ আবার সে দাবির ঘোর বিরোধী। এঁদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল, ইডেনে প্রথম দিন থেকে ভয়ংকর ঘূর্ণি কখনও সম্ভব নয়। তাই অত্যধিক কিছু কোনও অবস্থাতেই করা হবে না। পিচে জল বন্ধ করতেও চাইছেন না তাঁরা। এ দিন শুনলাম সকাল ছ'টা নাগাদ পিচে জল দেওয়া হয়েছে। তখন ভারত বা দক্ষিণ আফ্রিকা- কোনও টিমই ইডেনমুখো হয়নি। আরও একটা বিষয় প্রত্যক্ষ করা গেল। যা অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং। ভারতীয় টিমের প্র্যাকটিস পর্ব এ দিন শেষ হয়, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। কিন্তু গিলরা ইডেন ছেড়ে হোটেল পৌঁছনোর পরেও বাইশ গজ ঢাকা হল না। বাকি মাঠ 'কভার' দিয়ে রেখে, শুধু মাচ পিচকে খোলা রেখে দেওয়া হল। প্রায় তিন ঘণ্টা।
কেন? অত্যন্ত সহজ শিশির, শিশির। আকাশ থেকে নেমে আসা সহস্র জলবিন্দু, যা শীতের সন্ধেয় নেমে আসে এ শহরে। যা ভিজিয়ে দেবে পিচকে। তাকে পাইয়ে দেবে, তার প্রয়োজনীয় জল, ফিরিয়ে দেবে প্রাণ। ভারত পিচে জল দেওয়া কমাতে বলেছে। ইডেন মাঠকর্মীরা সে 'আদেশ' শিরোধার্য করেছেন। তাঁরা জল দেননি পিচে বিকেলে। কিন্তু প্রাকৃতিক 'জল-প্রপাত' আটকাবে কে? কিছু বলারও নেই। কারণ, যা হচ্ছে, সমস্ত আইন মেনে। 'প্লেয়িং কন্ডিশনসে' লেখা রয়েছে, খেলার আগের দিন পিচ ঢেকে রাখতে হবে। তার আগের দিন নয়। সাধে বারবার লিখছি, সিএবি চায় খেলাটা পাঁচ দিন যাক। সিএবি চায়, খেলার শেষ দিন পর্যন্ত মাঠে এসে তা উপভোগ করুক মানুষ। সিএবি চায়, ছ'বছর পর স্মরণীয় একটা টেস্ট দেখুক শহর। গৌতম গম্ভীররা জানেন কি না, জানি না। তবে বাংলায় একটা প্রবাদ রয়েছে। যা জেনে রাখা ভালো।
