প্রথম ইনিংস
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৮৯/১০ (মুথুস্বামী ১০৯, জানসেন ৯৩, কুলদীপ ১১২/৪)
ভারত: ২০১/১০ (যশস্বী ৫৮, ওয়াশিংটন ৪৮, জানসেন ৪৮/৬)
দ্বিতীয় ইনিংস
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২৬০/৫ ডিক্লেয়ার (স্টাবস ৯৪, জর্জি ৪৯, জাদেজা ৬২/৪)
ভারত: ১৪০/১০ (জাদেজা ৫৪, সুন্দর ১৬, হার্মার ৩৭/৬)
৪০৮ রানে পরাজিত ভারত।
টেস্ট সিরিজে ০-২ ব্যবধানে হার ভারতের।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০২৪-এ নিউজিল্যান্ড, ২০২৫-এ দক্ষিণ আফ্রিকা। পরপর দু'বছর দেশের মাটিতে টেস্টে চুনকাম গম্ভীর বাহিনী। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের শেষ ইনিংসে মাত্র ১৪০ রানে গুটিয়ে গেল ভারত। ইডেনের পর এবার গুয়াহাটিতে টেস্ট ম্যাচে ৪০৮ রানে হারল ভারত। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে-নেতৃত্বে সব দিক থেকে পর্যুদস্ত টিম ইন্ডিয়া। ব্রহ্মপুত্রের জলে ডুবল দেশের মাটিতে ভারতের টেস্ট আধিপত্যের গর্ব।
শেষদিনে একটা অসম্ভব লক্ষ্য ছিল ভারতের সামনে। ৫২২ রান তাড়া করতে হত। আসল সমস্যা কিন্তু সেটা নয়। সারাদিন ধরে ৮ উইকেট বাঁচাতে হত। ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা, তাতে গোটা একদিন ব্যাট করা পাহাড়প্রমাণ কাজই বলা যায়। আর সেটা প্রমাণও করলেন ঋষভ পন্থরা। একদিন তো অনেক দূরের কথা। লাঞ্চ পর্যন্তই টিকে থাকতে পারলেন না নীতীশ কুমার রেড্ডিরা। ২৫ বছর ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ অনায়াসে জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এত বড় ব্যবধানে কখনও টেস্ট হারেনি ভারত।
কোথা থেকে শুরু করা যায়? টসে হারাটা পন্থের হাতে ছিল না। বাকি দল নির্বাচন থেকে বোলিং পরিবর্তন, সবেতেই গন্ডগোল করেছে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক। ফিল্ডিং সাজানোয় বিস্তর গলদ। কাকে কখন বোলিংয়ে আনতে হবে, ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না পন্থ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা অনায়াসে ৪৮৯ রান করে গেল। আর সেখানে কি না প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দল গুটিয়ে গেল মাত্র ২০১ রানে। কোনও ব্যাটারের যেন মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মানসিকতাই নেই। সেখানে ব্যাটে-বলে মার্কো জানসেনের পারফরম্যান্স দেখে শন পোলক বলে গুলিয়ে ফেলা ভুল কিছু নয়।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ছবিটা মোটামুটি একই রকম। কুলদীপদের 'ঝেঁটিয়ে', অর্থাৎ সুইপ-রিভার্স সুইপ করে ২৬০ রান বোর্ডে তুলে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। অনেকের মনে হচ্ছিল, তারা হয়তো ডিক্লেয়ার করতে দেরি করছেন। কিন্তু দুই ভারতীয় ওপেনার আউট হয়ে বুঝিয়ে দিলেন কোনও ভুল করেননি টেম্বা বাভুমা। জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ৫৪৯ রান। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের রান ছিল ২ উইকেট হারিয়ে ২৭। পঞ্চম দিনে লাঞ্চ পর্যন্ত কেউই টিকতে পারলেন না। তবু অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাদেজা (৫৪) চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তবু কাউকে তো পাশে প্রয়োজন, যিনি স্পিনটা সামলে দিতে পারবেন। ঋষভ পন্থ (১৩), ধ্রুব জুরেলরা (২) প্রথম ইনিংসের ভুল থেকে কিছুই শেখেননি। তার থেকেও বড় কথা, টেস্ট ব্যাটিংয়ের 'বেসিক'টাই কি ভুলে গিয়েছেন তাঁরা? প্রত্যেকেই যেন আউট হওয়ার নিজস্ব ভঙ্গি আবিষ্কার করেছেন। বল ঘুরলে বা ওঠা-নামা করলেই স্লিপে খোঁচা দিয়ে আউট হওয়ার যেন প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছেন তারা। সাইমন হার্মারকে (৩৭/৬) খেলতে থরহরিকম্প অবস্থা। নীতীশ রেড্ডির (০) কি ভূমিকা দলে? অনেক অনেক প্রশ্ন। উত্তর অজানা।
গতবছর ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারল ২-০ ব্যবধানে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারত তিনবার দেশের মাটিতে চুনকাম হয়েছে। তার মধ্যে গম্ভীর আমলেই দু'বার। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জাও জুটল। দিশাহীন ভারতীয় ক্রিকেটকে আর কোন দিকে নিয়ে যাবেন গম্ভীর?
