শুভায়ন চক্রবর্তী, রাঁচি: রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলি যদি একসঙ্গে নেট সেশনে অবতীর্ণ হন, জাতীয় মিডিয়ার সার্বিক নজর কি অন্য দিকে যেতে পারে?
আর পাঁচটা দিনে, যায় না। সে প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিনটা ব্যাতিক্রম বটে। টেস্ট সিরিজে নির্মম থেঁতলানি খাওয়ার পর রবিবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে নামতে চলেছে ভারত (IND vs SA)। মহেন্দ্র সিং ধোনির শহর রাঁচিতে। এমনিতে টিমের বহিরঙ্গ দেখলে, বিশেষ টের পাওয়া যাবে না ঠিক কতটা ঝঞ্ঝা গৌতম গম্ভীরের সংসারের উপর দিয়ে এ মুহূর্তে বয়ে চলেছে। গত রাতে বিরাট কোহলি-ঋষভ পন্থ সহ টিমের অনেকে ধোনির বাড়িতে নৈশভোজ করতে গিয়েছিলেন। এ দিন টিমের নেট সেশনেও কোহলিদের মাঝে মাঝেই হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা গেল। কিন্তু তা টিমের আসল চেহারার প্রতিচ্ছনি নয়। একে তো টেস্ট সিরিজে বিপর্যয়ের ০-২ হার। তার উপর ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়ক শুভমান গিল নেই (ঘাড়ের চোট)। শ্রেয়স আইয়ার নেই (পাঁজরের চোট সারেনি)। বরং দেখতে গেলে, তিন-চারটে প্রশ্নের চক্রব্যূহ ঘিরে রেখেছে টিমটাকে।
১) শ্রেয়স আইয়ারের জায়গায় কে? রুতুরাজ গায়কেয়াড়।
২) কেএল রাহুল ওয়ানডে সিরিজের অস্থায়ী অধিনায়ক। তা হলে ঋষভ পন্থের কী হবে? তাঁকে কি খেলানো হবে?
৩) ওয়াশিংটন সুন্দর নাকি নীতীশ কুমার রেড্ডি রবিকারের উচিতে প্রথম ওয়ানডে-তে খেলানো হবে কাকে।
এক-এক করে আসা যাক। টিমের ট্রেনিং যদি কোনও সূচক হয়, তা হলে রবিবার ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের চার নম্বরে রুতুরাজকে দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিন একই নেটে ভাগাভাগি করে ব্যাট করতে দেখা যায় বিরাট কোহলি এবং রুতুরাজকে। কোহলিকে চিরচেনা অসামান্য লেগেছে। ড্রাইভ-পুল, সব শট মারার ক্ষেত্রেই তাঁর ব্যাটিং যথেষ্ট মনোমুগ্ধকর ছিল। আর শুধু নিজের ব্যাটিং অনুশীলন নয়। মাঝে মাঝে রুতুরাজের ব্যাটিং থামিয়ে তাঁকে পরমর্শও দিয়ে আসতে দেখা দিয়েছে কোহলিকে। যার পর জল্পনাটা বাড়ছে। ঠিক তেমনই জল্পনা চলছে, পন্থ নিয়ে। তিন মাস পর অন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে পন্থের যে দারুণ সুসময় চলছে, বলা যাবে না। বরং সমাদরের চেয়ে সমালোচনা তিনি পাচ্ছেন বেশি। প্রশ্ন হল, রাহুল থাকা সত্ত্বেও পন্থকে কি মিলে অর্ডারে খেলানো হবে? ওয়াশিংটন না নীতীশ-সেটা আর এক ধাঁধা।
ভারতের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল অবশ্য অতশত ভাবতে চান না। তাঁর মাথায় ঘুরছে, প্রত্যাবর্তন। টেস্ট সিরিজে চুরমার হওয়ার পর, ওয়ানডে সিরিজে টিমকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলা। মর্কেল জানেন, কাজটা সহজ নয়। বিশেষ করে দক্ষিণ অফ্রিকা টেস্ট সিরিজ জেতার পর আরও ভয়াল, আরও আগ্রাসী ভাবে ওয়ানডে সিরিজ জিততে ঝাঁপাবে। প্রাক্তন দক্ষিণ অফ্রিকা পেসার বললেনও, "শেষ দুই সপ্তাহ ভালো যায়নি আমাদের। কিন্তু তারপর কয়েকটা দিন আমরা পেয়েছি, নিজেদের নিয়ে ভাবার। আমাদের এখন একটিই লক্ষ্য। সাদা বলের ক্রিকেটে মন রাখা। নিজেদের সর্বস্ব দেওয়া। গত কয়েক বছর ধরে সাদা বলের ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করছি আমরা। আগামী কয়েক সপ্তাহ আমাদের ভালো যাবে আশা করছি। তবে আত্মবিশ্বাসী প্রোটিয়া দল সব সময় ভয়ঙ্কর।"
এই ঘুরেফিরে মনে হচ্ছে, ভারতকে শোচনীয় দশার ছাইগাদা থেকে দু'জনই এ মুহূর্তে পারেন। বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা। টেস্ট সিরিজ যে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে, অভিজ্ঞতার পরিবর্ত ক্রিকেটে আজও হয় না!
