সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টানা দু'বছর দেশের মাটিতে চুনকাম। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন টেস্টের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই টেস্টে হার। গত একবছরে দেশের মাটিতে পাঁচ-পাঁচটা টেস্টে পরাজয়। বিরাট-রোহিতদের জমানায় যা ছিল অসম্ভব, সেই শব্দটা এখন আর গৌতম গম্ভীরের ডিকশনারিতে নেই। এখন অনায়াসে বিদেশি দল এসে ভারতকে হারিয়ে চলে যায়। সেটা ইডেন হোক বা গুয়াহাটি। ভুলের পর ভুল হয়েছে সিরিজ জুড়ে। তার অন্তত পাঁচটি কারণ ধরা রইল।
গৌতম আরও গম্ভীর: সব দল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। সিনিয়র প্লেয়ারদের 'বিতাড়ন' করা হয়েছে। ফলে রোহিত-বিরাটদের উপর ব্লেম গেমের সুযোগ নেই। এটা তো স্পষ্ট, বর্তমান দলটা গম্ভীরের অঙ্গুলিহেলনে চলে। ফলে এই বিশাল ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। সমস্যা সেটাই, গম্ভীর ভুল শোধরাচ্ছেন না। দল নির্বাচনে সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সাই সুদর্শন না ওয়াশিংটন সুন্দর? কাকে তিন নম্বরে চান? পিচ কি ঘূর্ণি হবে না পাটা? নীতীশ রেড্ডির কাজটা ঠিক কী? ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস দেবেন না সাংবাদিক সম্মেলনে গরমগরম কথা বলবেন? গম্ভীরের কাজে হোমওয়ার্ক চোখেই পড়ছে না। এই জিগস পাজল খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে চলতে পারে, ১৪০ কোটি জনতার দলে নয়।
গিলের অনুপস্থিতি: ইডেনে দেড় দিনও মাঠে ছিলেন না অধিনায়ক শুভমান গিল। ঘাড়ের চোটের আগে পর্যন্ত যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, ততক্ষণ ভারত ব্যাটে-বলে চালকের আসনে ছিল। গুয়াহাটিতেও ব্যাটার গিল, অধিনায়ক গিলকে মিস করেছে ভারতীয় দল। যে দু'জন এই দলে ঢুকেছেন, সেই দু'জন নীতীশ রেড্ডি ও সাই সুদর্শন- কেউই গিলের বিকল্প নন। সবচেয়ে দুরবস্থা নেতৃত্বে। আক্ষরিক অর্থেই সবাই 'গার্ডেনমে ঘুম রাহা হ্যা।' কিন্তু তাতেও প্রশ্ন আছে। অধিনায়ক একটা ম্যাচে না থাকলে যদি দলের এই অবস্থা হয়, তাহলে দলের সামগ্রিক মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
টেস্ট ব্যাটিংয়ের অ-আ-ক-খ: তারকা বোঝাই দল। কিন্তু কাজের বেলা সবাই ব্যর্থ। এরপর ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে এরা সবাই জ্বলে উঠবেন। আইপিএলে বাউন্ডারির বাইরে বল আছড়ে পড়বে। কিন্তু টেস্ট এলেই থরহরিকম্প। কয়েকটা বল ডট হলেই হারাকিরি শুরু। বিদেশের গতিময় পিচে এঁরা সাবলীল। কিন্তু বল ঘুরলে পা কাঁপছে। স্পিনের বিরুদ্ধে যে দলের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা হত, তাদেরকে এখন নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এসে শেখাচ্ছে। কোনও ভারতীয় ব্যাটার সুইপ মারতে পারছেন না। যশস্বী, রাহুল, পন্থ, সুদর্শন- সবাই যেন আউট হওয়ার নিজস্ব স্টাইল আবিষ্কার করে ফেলেছেন।
পন্থের নেতৃত্ব: একসময় অস্ট্রেলিয়ার টিম পেইনকে 'টেম্পোরারি ক্যাপ্টেন' বলেছিলেন পন্থ। আশা করি এবার বুঝতে পারছেন টেস্ট নেতৃত্ব কী কঠিন বিষয়? উইকেটের পিছন থেকে কটাক্ষ ছুড়ে টেস্ট জেতা যায় না। তার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা লাগে। এক-একটা সিদ্ধান্ত টি-টোয়েন্টির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। পন্থের নেতৃত্বে সেগুলোর বড্ড অভাব। অতি রক্ষণাত্মক ফিল্ডিংয়ের সৌজন্যে জানসেন-জর্জিদের ব্যাটিংকে বিশ্বমানের মনে হচ্ছিল। এই তিনি নীতীশ রেড্ডিকে দিয়ে দুই ওভারের স্পেল করালেন, তো জাদেজাকে হয়তো ভুলেই গেলেন। ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
দায় সবার: ব্যাটাররা দুই টেস্টেই ব্যর্থ। ইডেনে বোলাররা ভারতকে ম্যাচে রেখেছিলেন। গুয়াহাটিতে সেটা পারেননি। কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যেই যেন কেমন একটা গা-ছাড় মনোভাব। দেদার রান বিলোনোর মধ্যে খোশগল্পে ব্যস্ত বুমরাহ-যশস্বী। কুলদীপ ওভার শুরু করতেই দেরি করছেন। ব্যাটিংয়ের সময় উলটো ছবি। সবাই যেন ভয়ে-ভয়ে খেলছেন। এর দায় তো সবার। এই দলে রোহিত-বিরাটের মতো সিনিয়রের দরকার ছিল। যিনি মাঠে থেকে 'শাসন' করতে পারতেন, 'গাইড' করতে পারতেন। সব কাজ ড্রেসিংরুম থেকে হয় না, সেটা কবে বুঝবেন গম্ভীর?
