রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: মাসখানেক আগেও ছবিটা এরকম ছিল না। বাংলাদেশকে চুনকাম করে সাফল্যের জোয়ারে ভাসছিলেন রোহিত-বিরাটরা। কিন্তু সেই ছবিটা যে বিপরীত পথে ভারতীয় দলকেই ধাওয়া করবে, তা কে জানত? নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠেই হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। ২৪ বছর পর ফের চুনকামের কলঙ্ক। দেশের মাটিতে ৪৬ রানে গুঁটিয়ে যাওয়ার লজ্জা। টপ অর্ডার ব্যর্থ। হাতছাড়া হয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষস্থানও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পর ময়নাতদন্তে উঠে আসতে পারে বেশ কয়েকটি দিক।
কড়া নজরে গৌতম গম্ভীর: রাহুল দ্রাবিড়ের বিশ্বজয়ের পর দায়িত্বে এসেছিলেন 'গুরু' গম্ভীর। তার পর শ্রীলঙ্কা সফরে ওয়ানডেতে লজ্জার হার মেনে নিতে হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টেস্টেই প্রশ্নের মুখে গম্ভীরের সিদ্ধান্ত। শেষ টেস্টে দলে ছিলেন দুই পেসার। প্রথম ইনিংসে মহম্মদ সিরাজ হাত ঘোরালেন ৬ ওভার, আকাশ দীপ ৫ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে সিরাজকে আর ডাকাই হয়নি। তাহলে ২ পেসার খেলানোর মানে কী? অস্ট্রেলিয়ায় গেলে ভারতকে ৪ পেসারের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে দেশে কেন ৪ স্পিনারে নামা হবে না? যেখানে স্পিন পিচসহায়ক। ফলে গম্ভীরকে নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
পরীক্ষার মুখে রোহিত-বিরাটরা: দুই মহাতারকাই চূড়ান্ত ব্যর্থ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এমনকী বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও বলার মতো সাফল্য নেই। কিউয়িদের সঙ্গে লড়াইয়ে ৬ ইনিংসে রোহিতের রান ৯১। বিরাটের রান ৯৩। মাসের পর মাস কেটে গিয়েছে, দুজনের ব্যাটেই সেঞ্চুরি নেই। যেখানে সিনিয়র হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত, সেখানে তাঁরাই যেন ক্রমশ 'বোঝা' হয়ে উঠছেন। রেহাই নেই অশ্বিন-জাদেজারও। অশ্বিন ব্যাট হাতে কোনও কোনও ইনিংসে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু ঘূর্ণি পিচেও বল হাতে ততটা জ্বলে উঠতে পারেননি। মন্দের ভালো জাদেজার পারফরম্যান্স। কিন্তু পরীক্ষায় বসতে হবে তাঁকেও। আর সেটা বর্ডার গাভাসকর ট্রফিতেই।
ঘরোয়া ক্রিকেটে অনীহা: নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের আগেই দলীপ ট্রফির আয়োজন করেছিল বোর্ড। পন্থ, শুভমান, সুন্দররা সেখানে খেলেছেন। সুফল যে পেয়েছেন, সেটা স্কোরবোর্ডেই প্রমাণ। কিন্তু কিন্তু বোর্ডের নির্দেশে নাকি পাত্তাই দেননি রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা। উলটে তাঁরা নাকি বোর্ডকে জানিয়েছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার মতো উৎসাহ পাচ্ছেন না। চুনকামের পর এই ধরনের 'আপত্তি'র আর জায়গা নেই। যত সিনিয়রই হোক না কেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে নামতেই হবে। সেখানের ফর্মের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখবে বোর্ড।
ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট: ভারতীয় ক্রিকেট পরিসরে সাম্প্রতিক আমদানি এই শব্দটি। যেহেতু তিন ধরনের ক্রিকেটই খেলতে হয়, তাই বাড়তি চাপ থেকে বাঁচাতে বিশ্রাম দেওয়া হয়। চোটআঘাত থেকে বাঁচানোও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আদৌ কি ততটা প্রয়োজনীয় ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট? এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। অতীতের তারকাদের তো এই সুবিধার প্রয়োজন পড়েনি। তাহলে এই যুক্তি দেখিয়ে আজকের ক্রিকেটাররা কেন অতিরিক্ত 'বিশ্রাম' নেবেন? বিশেষ করে যখন ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তখন ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ খেলে তো নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া যায়। সব মিলিয়ে 'কোপ' পড়তে পারে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টেও।