রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ইডেনের টিকিটের হাহাকার!
আইপিএল উদ্বোধনের ঠিক একদিন আগে অভিযোগ-অভিমান-ক্ষোভ ইডেনের আবহাওয়ায়। একে তো কেকেআর-আরসিবি ম্যাচের টিকিট সত্যি তো পাওয়া যাচ্ছে না মোটে! ন'শো টাকার টিকিট নেই। দু'হাজার টাকার টিকিট নেই। ন্যূনতম সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু! তার মধ্যে 'ব্ল্যাক'-এর ঘটনা তো আছেই। সব মিলিয়ে ইডেনে ক্রিকেট উৎসবের আগে রাগ আর মন খারাপের আবহ।
সেটা স্বাভাবিক। যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণও বটে। দীর্ঘ স্মরণকালে মনে পড়ে না, একখানা খেলার টিকিট নিয়ে এ রকম বীভৎস হাহাকার কখনও দেখেছি বলে। লোকে পকেটের হাজার দু'য়েক টাকা বরাদ্দ রেখেও একটা ছেঁড়া টিকিটের জন্য কাতরাচ্ছে! অনেকে অনুনয় করে বলছে, 'প্লিজ একটা টিকিট করিয়ে দিন না। দরকারে ডাবল দেব!' কোথাও বা কোহলিকে না দেখতে পারার আক্ষেপ দুই কিশোরের মধ্যে। রয়েছে পড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিট। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রিকেটপ্রেমী খেলা দেখবে কী! দু'টো আইপিএলের টিকিট কিনতে তো তার মাস মাইনের মোটা অংশ চলে যাবে!
কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না, একটা কেকেআর-আরসিবি ম্যাচকে ঘিরে এ জিনিস হচ্ছে কেন? এবারই প্রথম নাইট রাইডার্স বনাম আরসিবি হচ্ছে না ইডেনে। এবারই প্রথম ইডেনে আইপিএল উদ্বোধনও হচ্ছে না। বরং গত দশকে এর চেয়ে শতগুণ হাইভোল্টেজ ম্যাচ দেখেছে ইডেন। ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান। ২০১২-র আইপিএলে ৫ মে'র গাঙ্গুলি বনাম কেকেআর। টিকিটের হাহাকার তখনও ছিল। ইডেনের দর্শকাসনও তখন আজকের মতো সাতষট্টি হাজারই ছিল। কিন্তু তার পরেও সাধারণ মানুষ খেলা দেখতে পেরেছে। এবারের মতো ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি খেলার টিকিট নিয়ে। যেখানে লোকে বুঝতেই পারছে না, ন'শো আর দু'হাজারের টিকিট সব গেল কোথায়! সাধারণ লোকে তো পায়নি। 'বুক মাই শো'-র সাইট খোলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব নিঃশেষ দেখিয়েছে।
একাংশের অভিযোগের তির সিএবি'র দিকে। আর সিএবিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো করানোর কারণ, সহজেই অনুমেয়। রাগ মানুষ বাড়ির লোকের উপর করে। পাড়ার লোকের উপর নয়। বলা হচ্ছে, জগমোহন ডালমিয়া, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা অভিষেক ডালমিয়ার সময় টিকিটের ব্যবস্থাপনা এতটা অগোছালো ছিল না। এক প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার রীতিমতো ঝাঁঝালো ভাবে বলছিলেন যে, তাঁদের মূল্য নামতে-নামতে এখন এসে ঠেকেছে একটা টিকিটে! মাত্র একটা! আর সেটা পেতেও জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে যাচ্ছে! আঙুল উঠছে ভোট রাজনীতির দিকেও। সিএবি-র তরফ থেকে সিএজি-র (ক্যাগ) যুক্তি দেখালেও, তা ধোপে টেকার সম্ভাবনা কম। কারণ, 'ক্যাগ'-এর নির্দেশ অনুসারে, নব্বই শতাংশ টিকিট সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার কথা। সেটা যাচ্ছে তো? ইডেনের টিকিটে অধিকার সাধারণ মানুষের। অধিকার, ক্রিকেটারদের। যাঁরা বাংলা ক্রিকেটকে সম্পদশালী করেছেন। করছেন।
তার সঙ্গে টিকিট ব্ল্যাক হওয়ার গল্প তো রয়েছেই। প্রায় চোখের সামনেই ব্ল্যাকে দেদার বিকোচ্ছে টিকিট। সেটা আটকাবে কে? ফলে প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও জানা। খেলার টিকিট সব যাচ্ছে কোথায়?
