আলাপন সাহা, দুবাই: পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর আকাশের দিকে একবার তাকালেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার নজির হয়ে গেল তাঁর। সঙ্গে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম দু’শো উইকেটের মালিকানাও পেয়ে গেলেন। কে জানে, সেই সময় শামির গত এক বছরের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল কি না! কম কিছুর মধ্যে দিয়ে তো যেতে হয়নি তাঁকে। বিশ্বকাপের পর চোটের জন্য চোদ্দো মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় পেসার।
শামির ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাঝে মধ্যে তিনি কেঁদেও ফেলতেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের আশা এক মুহূর্তের জন্য ছাড়েননি। প্রথম প্রথম কিছুটা সংশয়ে ছিলেন ঠিকই। তবে নিজের কাছের লোকজনদের শামি শুধু বলতেন, তিনি ফিরবেন। ফিরতেই হবে তাঁকে। এবং শামি শুধু ফিরলেন না, দুবাই তাঁর মহারাজকীয় একটা প্রত্যাবর্তন দেখল। দেখতে গেলে, প্রত্যাবর্তন আগেই হয়েছিল। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলেছিলেন তিনি। আর এদিন আইসিসি ট্রফিতে ফেরার মুহূর্তটা স্মরণীয় করে রাখলেন।
শামির ঘনিষ্ঠমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত এক বছরে যেমন রিহ্যাব, ট্রেনিং চলেছে। তেমনই মানসিক শক্তি বাড়াতেও পরিশ্রম করেছেন শামি। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মেন্টাল স্ট্রেংথ’। সঙ্গে নিজের কিছু পুরনো ভিডিও দেখতেন। যে কোনও ক্রিকেটারের কাছেই দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকা বিশাল একটা ধাক্কা। মানসিকভাবে যাতে ভেঙে না পড়েন, তার জন্য বেশিরভাগ সময় মাঠেই পড়ে থাকতেন। ক্রাচ নিয়ে মাঠে হাঁটতেন। মাঠে বসে থাকতেন। বাচ্চাদের সঙ্গে আড্ডা মারতেন। খুদে ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিতেন। শামির ঘনিষ্ঠ একজন বলছিলেন, ‘‘সেই সময় শামি বেশিরভাগ সময় মাঠেই পড়ে থাকত। একজন ক্রিকেটারের কাছে মাঠই সবকিছু। ও জানত ফিরতে সময় লাগবে। মানসিকভাবে নিজেকে তরতাজা রাখার চেষ্টা করত। বাচ্চাদের প্র্যাকটিস করার সময় শামি ওখানে বসে থাকত। ওদের সঙ্গে আড্ডা দিত। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাত। সেটা খুব কাজে দিয়েছে।’’
বৃহস্পতিবার রাতেও মহম্মদ শামিকে ভীষণ আবেগতাড়িত দেখাচ্ছিল। পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর আকাশের দিকে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুঁড়েছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলছিলেন, ‘‘বাবা আমার আইডল। ফ্লাইং কিসটা বাবাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া।’’ আইসিসি ইভেন্টে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট হয়ে গেল তাঁর। সেই প্রসঙ্গে শামি বলে গেলেন, ‘‘আমার মাথায় শুধু একটা ব্যাপারই থাকে, সেটা উইকেট নিতে হবে। ইকোনমি রেট নিয়ে ভাবি না। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে আট ঘণ্টা ধরে ট্রেনিং করতাম। সেই খিদেটা আমার মধ্যে ছিল। আপনার মধ্যে যদি ভালো পারফর্ম করার খিদে না থাকে, তাহলে আপনি কখনওই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না।’’ বৃহস্পতিবারের দুবাই দেখেছে সেই খিদে। আর সেটা যদি এমনই জ্বলন্ত থাকে, তা হলে ভারতের আগামী প্রতিপক্ষদের কপালে যে অসীম দুঃখ আছে, এখনই লিখে দেওয়া যায়!
