শিবশঙ্কর পাল: রবিবার রাতে রিচার (Richa Ghosh) হাতে বিশ্বকাপ দেখার পর প্রথম দিনের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। আমি তখন বাংলা মহিলা টিমের কোচ। ছয়-সাত বছর আগের কথা। রিচার বয়স তখন ষোলো-সতেরো হবে। বিশ্বাস করবেন কি না, জানি না। তবে প্রথম দেখার পরই মনে হচ্ছিল এই মেয়েটা ইন্ডিয়া খেলবে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, ক্রিজে দাঁড়িয়ে অনায়াসে ছয় মারতে পারা। মহিলা ক্রিকেটারদের মধ্যে ওই বয়সে কাউকে ওরকম এফোর্টলেসলি ছয় মারতে খুব একটা দেখিনি। রিচার সেটা এক্স ফ্যাক্টর ছিল। তবে বেশিরভাগ ছয় মারত, মিড উইকেট দিয়ে। আমি ওকে বলেছিলাম, ভারতের হয়ে খেলতে গেলে, শুধু মিড উইকেট দিয়ে মারলে চলবে না। মাঠের সব প্রান্ত দিয়ে শট খেলতে হবে। শুরুর দিকে ওপেন করত। আমি জানতাম টিমের কম্বিনেশনের জন্য ওকে মিডল অর্ডারে দরকার। কারণ মিডল ওভারে নেমে ম্যাচ বদলে দেওয়ার ক্ষমতা ওর মধ্যে ছিল। সেটা বলেছিলাম ওকে।
রিচার আর একটা ব্যাপার আরও ভালো লেগেছিল। ওর কঠোর পরিশ্রম করার ইচ্ছে। ক্রিকেট এথিক্স মারাত্মক রিচার। কলকাতায় থাকলে দিন-রাত পাটুলির অ্যাকাডেমিতে পড়ে থাকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রেনিং করে যায়। বাপ্পাদার কথাও এখানে বলব (বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত)। রাতেও রিচার ট্রেনিং করতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য মাঠে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বাপ্পাদা। রিচা সারাদিন নেটে ব্যাটিং করে যেত। এমনও দিন গিয়েছে, যেদিন একই শট কমপক্ষে হাজার-দেড় হাজার বার খেলেছে। যাতে একেবারে নিখুঁত হওয়া যায়, পাটুলির ওই মাঠেই রান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। ওখানেই বাকিদের সঙ্গে রিচা খেয়ে নিত। ভারতীয় টিমের প্লেয়ার বলে কোনও অহংকার ওর মধ্যে নেই। বলা হয়নি। পাটুলির সেই মাঠেই ব্যাট করার সময় এত জোরে একটা ছয় মেরেছিল রিচা যে, মাঠের পাশে দাঁড়ানো গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়! গাড়ির মালিক প্রথমে রে-রে করে এলেও রিচাকে দেখে আর কিছু বলেনি। বরং সেলফি নিয়ে যায়!
একবার প্রথম দিন থেকে রিচাকে বলতাম কঠোর পরিশ্রম করে যা শুধু। একদিন না একদিন তার রেজাল্ট ঠিক পাবি। বিশ্বকাপ জয়ের পর রিচা ফোন করেছিল। প্রায় প্রত্যেকটা ম্যাচের পরই ওর সঙ্গে কথা হত। শুধু একটা কথাই বলতাম, কখনও বিশ্বাস হারাবি না। রবিরার রাতে ফোনে প্রথম কী বলবে বুঝতে পারছিল না। বুঝতে পারছিলাম ওর মনে ভিতরে কী চলছে। শুধু বলছিল, আমরা পেরেছি স্যার। আমরা পেরেছি। এতদিনের সব পরিশ্রম আজ সার্থক। জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত। ওকে বললাম, আজ তোদের দিন। উৎসব কর। রিচা বলছিল, পুরো ভারতীয় টিম ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত ছিল ট্রফি জিততে। মাঝে যখন পরপর কয়েকটা ম্যাচ হারল টিম, তখনও রিচা শুধু একটাই কথা বলত-স্যর দেখবেন, আমরা ঠিক বিশ্বকাপ জিতব।
