সুব্রত বিশ্বাস: প্রতিদিন দশ লক্ষেরও বেশি জনসমাগম। তার মাঝেই ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’। রমরমিয়ে চলছে সমাজবিরোধীদের ঠেক। বলা ভাল, অপরাধ করে গা-ঢাকা দেওয়ার জায়গা। চুরি, ছিনতাইয়ের সামগ্রী ভাগাভাগি, নেশার আসর, এমনকী চলে যৌনাচারও! ঘটনাস্থল হাওড়া স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড। শেডের শেষপ্রান্তে এই ঠেকটির হদিশ সাধারণ যাত্রীদের অজানা। কারণ, তা লোকচক্ষুর আড়ালে।
[পথ দেখানোর ছলে দৃষ্টিহীন ছাত্রের সর্বস্ব চুরি]
হাওড়া স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বিল্ডিংটির দোতলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুলিদের বিশ্রামকক্ষ। একেবারে শেষপ্রান্তে শৌচালয়। দোতলার সমনের অংশটি লোহার জাল দিয়ে ঘেরা। শৌচালয়গুলির সামনে ও পাশে পাকা দেওয়াল। কুলিদের বিশ্রামকক্ষের সামনেই ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড। দু’দিকে পাকা দেওয়ালের কারণে শেডের উপরের একটি বড় অংশ লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকে। প্ল্যাটফর্ম থেকে শেডের উপরের অংশটি দেখা যায় না। শেডের ও বিল্ডিংয়ের পিছন দিকটি আবার টিন দিয়ে ঘেরা। পাশের রাস্তা দিয়ে বঙ্কিম সেতুতে ওঠা যায়। রাস্তার পাশে কোমর সমান পাঁচিল। সেই পাঁচিল টপকে অপরাধীরা সহজেই ওঠে যায় শেডের উপরে। বঙ্কিম সেতু যাওয়ার রাস্তাটি হাওড়া পুলিশের অধীনে। সেখানে চুরি-ছিনতাই করে শেডের উপরে ওঠে পড়তে পারলেই কেল্লা ফতে। কারণ, শেডটি রেলপুলিশের এলাকার মধ্যে পড়ে। হাওড়া জেলা পুলিশের একাংশের দাবি, এই ‘এলাকা’ বদলানোর নীতিতেই পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। হাওড়া হোটেল চত্বর, হাওড়া ময়দান, বঙ্কিম সেতু, কিংস রোড, মাছ বাজার, বাস স্ট্যান্ড এলাকায় মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরি করে পাঁচিল টপকে সহজেই হাওড়া স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শে্ডের উপরে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। সন্ধে্র পর থেকেই আড্ডা জমলেও দিনেরবেলায় শেডের ছাদ একেবারে শুনশান। তাই সাধারণ মানুষও কিছু টের পান না।
হাওড়া স্টেশনের শেডে অপরাধীদের আস্তানাটি অবশ্য নতুন নয়। বরং বেশ পুরানো। হাওড়া স্টেশন চত্বরেই অপরাধে হাত পাকিয়েছে দুষ্কৃতী ভোলা। তার মা স্টেশনে ভিক্ষা করতেন। বাবা টেন্ডল বাগান এলাকার চোলাই বিক্রেতা ছিলেন। আর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করত ভোলা। মা-বাবা মারা গিয়েছেন। আরপিএফের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় ভোলাও আর ট্রেনের সামগ্রী চুরি করে না। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের উপর সমাজবিরোধীদের ঠেক করে তৈরি করেছে এই ভোলাই। রাতে সেখানে জড়ো হয় অপরাধীরা। জেলা পুলিশ এলাকায় চুরি, ছিনতাই যেমন করে, তেমনই হাওড়া স্টেশনেও অপরাধের সুযোগ পেলে ছাড়ে না। কেউ প্ল্যাটফর্মে মোবাইলে চার্জ দেওয়া অবস্থায় অন্যমনস্ক হলেই তা চুরি করে নেয় বিশ্বজিতের দল। দুষ্কৃতীদের কথা জানা ছিল না রেলপুলিশের। পরে গোচরে আসার পর, রাতে ওই শেডে তল্লাশি অভিযান চালানোর আশ্বাস দিয়েছে আরপিএফ। পাঁচিল ভেঙে শেডটি দৃশ্যমান করার জন্যও তারা রেলের কাছে অনুরোধ জানাবে বলে আশ্বাস মিলেছে।
[১৫ বছর পর হারানো ছেলেকে খুঁজে পেল পরিবার]
The post হাওড়া স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের শেড দুষ্কৃতীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’, জানেই না রেলপুলিশ appeared first on Sangbad Pratidin.