রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দুই ২৪ পরগনার পর এবার পূর্ব মেদিনীপুরে ‘যশ’ বিধ্বস্তদের পাশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর ‘গড়’ তাজপুর লাগোয়া এলাকা। শুনলেন বাঁধ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিলেন তিনি। একইসঙ্গে বাঁধের বেহাল দশা নিয়ে উগরে দিলেন ক্ষোভ। নাম না করেই তুলোধোনা করলেন শুভেন্দু অধিকারীকে। বললেন, “মানুষের টাকা সরিয়ে কারা এই বাঁধ নির্মাণ করেছেন সবাই জানেন। কাউকে রেয়াত করা হবে না।” এখানেই শেষ নয়, শুভেন্দুর ‘নাবালক’ কটাক্ষের জবাব দিলেন অভিষেক। বললেন, “সাবালকের ব্যর্থতা দেখতে নাবালককে আসতে হয়। সাবালক শুধু বড়-বড় ভাষণ দিচ্ছেন। উনি যখন সাবালক তো সাবালকত্বের পরিচয় দিন। সাবালককে অন ক্যামেরা টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। নাবালককে কিন্তু দেখা যায়নি।”
বুধবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণি, তাজপুর লাগোয়া এলাকা, রামনগর, কাঁথির বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলেন তিনি। তাজপুর সংলগ্ন চাঁদপুর এলাকায় হেঁটে হেঁটে বেহাল বাঁধগুলি ঘুরে দেখেন অভিষেক। সেই সময় বাঁধ নির্মাণকারী ঠিকা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা।
[আরও পড়ুন: একবছর ধরে কাজের জায়গায় আটকে স্বামী, কাছে না পেয়ে ‘আত্মঘাতী’ স্ত্রী]
অভিষেকের আসার খবর পেয়েই বাঁধের উপর জড়ো হয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের আরজি, “দ্রুত এই বাঁধ ঠিক করা হোক। আগামী ১২ তারিখ ফের ভরা কোটাল আছে। বাঁধ ঠিক না হলে গ্রামে আবার জল ঢুকবে।” সকলের অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন যুব তৃণমূল সভাপতি। আশ্বাস দিয়ে বলেন, “সরকার সব করে দেবে। নিশ্চিন্তে থাকুন। এখন ঘর বাড়ির মায়া করবেন না। আগে প্রাণে বাঁচুন।” তিনি আরও জানান, “আগামী মাস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংকে সরকারি সাহায্য ঢুকতে শুরু করবে। সকলের টাকা পেতে একটু সময় লাগবে। সরকারকে সেই সময়টা দিন। সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন।” এই এলাকার পরিদর্শন সেরে অভিষেক কাঁথির আশ্রয় শিবিরগুলিও ঘুরে দেখেন। বলেন, “যাঁর যা ক্ষতি হয়েছে, তার খতিয়ান দিন। ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” পাশাপাশি শিশুদেরও বিশেষ দেখভালের নির্দেশ দেন তিনি।
বাঁধ পরিদর্শনের সময় সঙ্গে থাকা মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি, এলাকার তৃণমূল নেতা সুপ্রকাশ গিরির কাছ থেকে সমস্ত তথ্য নেন সাংসদ। কেন চার মাসের মধ্যে বাঁধ ভেঙে পড়ল, তা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাস্তার নিচে কেন বালি দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের যুব সভাপতি। তাঁর কথায়, “এই রাস্তা, গার্ড ওয়াল তৈরির তদারকি করেছে দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ। কে এর চেয়ারম্যান ছিলেন সকলেই জানেন। বাঁধ তৈরি করেছেন সেচমন্ত্রী। কে ছিলেন এই পদে তাও জানেন। মানুষের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থ বড় হয়েছে অনেকের কাছে। মানুষের অর্থ গ্রাস করে নিজেদের জীবন সমৃদ্ধ করেছে। তাঁদের একজনকেও রেয়াত করা হবে না। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।” নাম না করেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে অভিষেকের তোপ, “নিজেদের অর্থ বাঁচাতে অন্য রাজনৈতিক দলের কাছে মেরুদণ্ড বেচে দিয়েছেন কেউ কেউ।”
[আরও পড়ুন: ‘যশে’র ক্ষত মুছতে সরকারের ‘দুয়ারে ত্রাণ’, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য দিতে শুরু হল কাজ]