শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: “ভাল করিয়া বাজাও দোতারা…”, গানের তালে সেফ হাউসে উদ্দাম নাচ উপসর্গহীন কোভিড (COVID) আক্রান্তদের। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের রাজবাড়ি পাড়ার ঘটনা। মানসিক চাপ কমাতে এই ব্যবস্থা বলেই জানাচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
কেবল সন্ধে নেমেছে। সূর্য ডুবতেই শুরু হয়ে গেল নাচ -গানের আসর। জলপাইগুড়ি রাজবাড়ি পাড়া সেফ
হাউসের সামনে ফাঁকা জমিতে গানের তালে তালে নেচে উঠলেন কোভিড আক্রান্তরা। এই আয়োজন স্বাস্থ্যদপ্তরের। করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি এই মিউজিক থেরাপির ফলে ঘর পরিবার ছেড়ে থাকা রোগীর
মানসিক চাপ অনেকটাই কমছে বলে মনে করছেন সেফ হাউসের দায়িত্ব থাকা চিকিৎসক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। খুশি চিকিৎসাধীন রোগীরাও। তনুশ্রী সেন নামে এক চিকিৎসাধীন করোনায় আক্রান্ত জানান, প্রথম দিন বাড়ি ছেড়ে থাকতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ির মতো পরিবেশ মন খারাপ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। সময় মতো খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি বিনোদনের এই ব্যবস্থায় অনেকটাই খুশি তাঁরা।
বিশ্ববাংলা কোভিড হাসপাতালের পাশাপাশি সাতটি সেফ হাউস রয়েছে জলপাইগুড়ি জেলায়। তাতে ৪৩৫ জন করোনায় আক্রান্তকে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি ডাঃ সুশান্ত রায় জানান, কোভিড মোকাবিলায় তিন রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। যাদের উপসর্গ-সহ শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাঁদের জন্য কোভিড হাসপাতাল। যাদের উপসর্গ নেই কিন্তু শরীরে করোনা বাসা বেঁধেছে তাঁদের জন্য হোম আইসোলেশন এবং যাদের বাড়িতে ব্যবস্থা নেই তাদের জন্য সেফ হাউসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে উপসর্গ না থাকলে সেফ হাউসে না এসে হোম আইসোলেশনে থাকতে পছন্দ করছেন বেশির ভাগ করোনায় আক্রান্ত। আর সেখানেই নতুন করে বিপদ বুঝছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, হোম আইসোলেশনে থেকেও অনেকে আইসোলেশন মানছেন না।
[আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ না করে বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দিক রাজ্য, ক্ষতি ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ ব্যবসায়ীরা]
ডাঃ সুশান্ত রায় জানান, বাড়ি থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে আড্ডা মারছেন অনেকেই এমন অভিযোগ ও পাচ্ছেন তাঁরা। আর তাতেই বিপদের মেঘ ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। ডাঃ রায়ের কথায়, সবার বাড়িতে গিয়ে নজর রাখা স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষে সম্ভব নয়। সেই কারনেই এবার থেকে উপসর্গহীন করোনায় আক্রান্তকে সেফ
হাউসে রাখার উপর জোড় দিচ্ছেন তারা। জানান, সেফ হাউসে ৪৩৫ জন থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১৩১ জন। অন্যদিকে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১১৯ জন। এই অবস্থায় সেফ হাউসে রোগীকে রেখে চিকিৎসার উপর জোড় দিতে চান তাঁরা।এতে রোগীরও সুবিধা হবে। ডাঃ রায় জানান, হোম আইসোলেশনে অনেক সময় রোগীর পালস নেমে যায়।অক্সিজেনের সমস্যা হয়।সেক্ষেত্রে রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনার পথে ঝুঁকি তৈরি হয়। সেই সব দিক চিন্তা করেই এবার এবার হোম আইসোলেশন নয়। সেফ হাউস কনসেপ্টে জোর দিতে চলেছে জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর।