shono
Advertisement
Joynagar Moya

মোয়া তৈরিতে পর্যাপ্ত রসের জোগানে বসবে খেজুর গাছ, পরিকল্পনা জয়নগর পুরসভার

বিগত দুদশকে জয়নগর-বহড়ু জুড়ে খেজুর গাছ কমছে হু হু করে।
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 06:37 PM Dec 21, 2024Updated: 06:37 PM Dec 21, 2024

কনকচুর খইয়ের সঙ্গে মেলে খেজুর গুড়। পাকে পাকে তৈরি হয় মহার্ঘ মোয়া। স্বাদে-গন্ধে তার নস্টালজিয়া এখনও বাঙালির হৃদয় ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে। এককথায় যাকে দুনিয়া চেনে ‘জয়নগরের মোয়া’ বলে। কোন রেসিপির জাদুতে আজও সেই আকর্ষণ অটুট, কেমন চলছে কারবার–খোঁজ নিলেন অভিরূপ দাস

Advertisement

যত মোয়া। তত গুড়। তত খেজুর গাছ। এদিকে ফ্ল‌্যাট সংস্কৃতিতে কোপ পড়ছে গাছের গোড়ায়। বিগত দুদশকে জয়নগর-বহড়ু জুড়ে খেজুর গাছ কমছে হু হু করে। নতুন করে সে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা। পুরসভার ভাইস চেয়ারম‌্যান রথীন মণ্ডল জানিয়েছেন, মোয়ার জন‌্য বিশ্বের দরবারে জয়নগরের নাম। এ মোয়ার অন‌্যতম কাঁচামাল খেজুর গুড়। পুরসভার হাতে যেটুকু জমি রয়েছে তার চারধারে খেজুর গাছ বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।

এলাকার বাসিন্দাদেরও সচেতন হওয়ার ডাক দিয়েছে পুরসভা। রথীনবাবুর কথায়, ‘‘মানুষকে সচেতন হতে হবে। খেজুর গাছের সংখ‌্যা কী করে বাড়ানো যায় তা নিয়ে একটা বৈঠক আমরা করেছিলাম। এটা যেহেতু জয়নগরের গৌরব সেটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’’ এলাকার ব‌্যবসায়ীরা বলছেন, যেমন তেমন খেজুর গুড় হলেই চলবে না। জয়নগরের মোয়া তৈরিতে লাগবে এই এলাকারই গুড়। তেমন স্বাদ মেলে না অন‌্য মাটির খেজু়র গাছে।জয়নগর-মজিলপুরের ইতিহাস ঘাঁটলেই এ রহস‌্য উন্মোচন। বহড়ুর ভূমিপুত্র মোয়া গবেষক ভবানী সরকার জানিয়েছেন, ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায়, কয়েকশো বছর আগে নদী গিয়েছিল এই অঞ্চল দিয়ে। মজে যাওয়া সে নদী থেকেই এলাকার নাম মজিলপুর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতিপথ বদলেছে নদী। কিন্তু নদীর পলি মেশানো সে মাটির জন‌্যই এই এলাকার খেজু়র রস এত মিষ্টি। সম্প্রতি মাত্র বিশ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্মীকান্তপুরের খেজুর গুড় চেখে গা শিরশির করেছে ভবানীবাবুর। ‘‘গন্ধটা আছে বটে। কিন্তু স্বাদে নোনতা ভাব মারাত্মক। জয়নগর-বহড়ুর গুড়ের ধারেকাছেও আসে না ওই গুড়।’’

জয়নগরের মোয়ার স্বাদ অটুট রাখতে গেলে তাই এলাকারই খেজুর গাছের গুড় প্রয়োজন। পুরসভার পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মিষ্টি ব‌্যবসায়ীরা। জয়নগর-বহড়ু-শ্রীপুর জুড়ে মোয়া তৈরি করে সংসার চলে হাজার হাজার মানুষের। শীতের এই তিন মাসই তো মোটা রোজগার। কেমন সে রোজগার? ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়েছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম‌্যান। ‘‘শ্রীপুর-বহড়ু-মল্লভপুরের গ্রামাঞ্চলের এত মানুষ এই সময় মোয়া তৈরি করেন। আমরা কোনও বড় রাজনৈতিক মিটিং করি না। মাঠ ভরাতে লোকই তো পাব না। সবাই মোয়া বানাতে ব‌্যস্ত।’’

শীতকালে গাছ কাটেন শিউলিরা। শিউলিদের নিজস্ব গাছ নেই। যাঁর গাছ তাঁকে একেকটা গাছ পিছু মরশুমে দুকেজি গুড় দেন শিউলি। সাত কেজি রস মেরে মেরে মাত্র এক কেজি গুড় বেরোয়। টানা খেজুর গাছ কাটাও যায় না। ভালো খেজুর রস পেতে গেলে তিনদিন কাটার পর গাছকে মাঝে সাতদিনের বিশ্রাম দিতে হয়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী অনেক গাছের প্রয়োজন এলাকায়। ইতিমধ্যেই বিডিও স্তরে চিঠি দিয়েছেন মোয়া গবেষক ভবানী সরকার। তাঁর বক্তব‌্য, ‘‘পুকুর পাড়ে, কিংবা বড় রাস্তার দুধারে বসানো হোক খেজুর গাছ। তাতে বর্ষায় রাস্তার দুপাড়ের ভাঙনও ঠেকানো যাবে।’’
                                                                                                                                        আজ শেষ পর্ব

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ফ্ল‌্যাট সংস্কৃতিতে কোপ পড়ছে গাছের গোড়ায়। বিগত দুদশকে জয়নগর-বহড়ু জুড়ে খেজুর গাছ কমছে হু হু করে।
  • নতুন করে সে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভা।
  • পুরসভার ভাইস চেয়ারম‌্যান রথীন মণ্ডল জানিয়েছেন, মোয়ার জন‌্য বিশ্বের দরবারে জয়নগরের নাম।
Advertisement