নন্দন দত্ত, বীরভূম: পুজোর আগেই যেন ঘরে ফিরল উমা! ৯ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল দাস পরিবারের মূক ও বধির মেয়ে শুকতারা। এবার আধার কার্ডে আঙ্গুলের ছাপ ধরে বাড়ি ফিরলেন তিনি। তাই এবার দাস পরিবারের পুজো আনন্দ দ্বিগুণ। এবার সত্যিকারের উমার ঘরে ফেরার গল্প খয়রাশোল পঞ্চায়েতের বড়কুড়ি গ্রামে।
আধার কার্ডের আঙুলের ছাপ ধরে ঘরের ঠিকানায় ফিরল ১৮ বছরের মেয়ে শুকতারা দাস। গত নয় বছর উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সরকারি হোমে ঠাঁই হয়েছিল নাবালিকা মেয়েটির। সেখানে নাম হয়েছিল সুচিত্রা দাস। পাঁচড়া প্রধানের সূত্র ধরে তাদের উদ্যোগেই মহালয়ার আগেই বাপের বাড়িতে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শুকতারা।
[আরও পড়ুন: ফের পিছিয়ে গেল জামিনের শুনানি, জেলেই পুজো কাটবে অনুব্রত মণ্ডলের?]
বড়কুড়ি গ্রামে এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিল কুড়ানি দাসের। তাঁর স্বামী চোখে দেখেন না। কুড়ানি ও তাঁর ছেলে সকালে স্বামীর ভরসায় মূক ও বধির মেয়েকে রেখে কাজে যেতেন। একদিন বাড়ি ফিরে আর নাবালিকা মেয়েকে পায়নি তাঁরা। আত্মীয়স্বজন থেকে পরিচিত, এলাকার সব পুকুর ঘাট, আশেপাশের খাল বিল সমেত সব খোঁজাখুঁজি চলে। হদিশ মেলেনি তাঁদের শুকতারার। খয়রাশোল থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করেছিলেন কুড়ানি।
কিন্তু কী করে, কাদের সঙ্গে শুকতারা রায়গঞ্জের সরকারি হোমে গিয়ে পৌঁছেছিল তা কেউ জানতে পারেনি। মেয়েকে কাছে পেয়ে সে কথা জানতেও চায়নি কেউ। এদিকে হোম কর্ত্তৃপক্ষ কয়েকদিন আগে তাঁদের হোমে থাকা বাসিন্দাদের নিয়ে আধার কার্ড সংশোধন করাতে যায়। সেখানে শুকতারা বায়োমেট্রিক মেশিনে আঙুলের ছাপ দিতেই তাঁর ঠিকানা, পরিচয় বেরিয়ে আসে। সেই সূত্র ধরে থানা পাঁচরা পঞ্চায়েতের প্রধান আসমা বিবিকে ফোন করে। আসমা বিবি জানান, “আমি আমার স্বামীকে বিষয়টি জানায়। তিনিই হোমে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসনকে হোমের তরফে মেল করে বিষয়টি জানান হয়।” প্রধান আসমা বিবি শুকতারার মা ও গ্রামের কিছু প্রতিনিধিকে রায়গঞ্জের ওই হোমে পাঠায়।
[আরও পড়ুন: ফার্ম হাউসে ডেকে মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ, বিজেপি নেতাকে তলব করল আদালত]
বুধবার বাড়ি ফিরেই মেয়েকে জড়ি ধরে কেঁদে ওঠেন মা। হারিয়ে যাওয়া নাবালিকা শুকতারা আজ সাবালিকা। কুড়ানি জানান, “প্রধানের জন্যই আমরা ওখানে যেতে পারলাম। প্রধান শুকতারার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্য করেছেন। পুজোর আগে যেন উমা আমার ঘরে ফিরল। এবার পুজোয় আমার উঠোন জুড়ে হাজার শুকতারার আলো। শরতের আলোয় আজ থেকে ঘর জুড়ে শুধু শরতের গন্ধ। মাতৃপক্ষের আগেই আমার ঘরে পুজো শুরু হয়ে গেল।”