টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: লজেন্স খেতে খেতে বিষম বিপদ! গলায় আটকে সে এক কেলেঙ্কারি অবস্থা। শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাঁকুড়ার মৌসুমী মুখোপাধ্যায়ের। প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত! এমন বিপদের মুহূর্তে দুই মেয়ের কৌশলেই বাঁচল জীবন। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেন মৌসুমী দেবী। কিন্তু সেই রাস্তা এতটা মসৃণ ছিল না মোটেই। মেয়েরা 'হাইমমিখ' কৌশল প্রয়োগ না করলে মৃত্যু অবধারিত ছিল। তাই তো মেয়েদেরই উদ্ধারকারী বলে বুকে টেনে নিচ্ছেন মা।
হাইমলিখ পদ্ধতি শেখাচ্ছেন 'স্যর' সৌম্য সেনগুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
ঘটনা গত ১৩ জুলাইয়ের। বাঁকুড়ার (Bankura) সোনামুখী থানার পাথরমোড়া গ্রামের ৪৭ বছরের মৌসুমী মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, "লজেন্স খেতে খেতে হঠাৎ আমার গলার মধ্যে চলে যায়। কেশে কেশেও বের করতে পারছিলাম না। কথাও বলতে পারছিলাম না। শ্বাস নিতে কষ্ট (Breathing trouble) হচ্ছিল।'' এমনই সংকটের মুহূর্তে দুই মেয়ে বছর কুড়ির বৃষ্টি আর ছাব্বিশের চতুর্থীই এগিয়ে আসে ত্রাতা হয়ে। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্রী বৃষ্টি বলছেন, "সেদিন দুপুর ১২.৩০ নাগাদ মা লজেন্স খাচ্ছিলেন। খেতে খেতে শ্বাসরোধ হয়। কী যে মর্মান্তিক দৃশ্য, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না! মায়ের নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখি, কোনও নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেই। আর মা গলা দিয়ে একটা অন্য রকম আওয়াজ করছে আর একটা অদ্ভুত কষ্ট দেখতে পাচ্ছি। শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় ছটফট করছেন! আমি আর আমার দিদি বাড়িতে ছিলাম। দিদি তখনই আমাকে বলে যে হাইমলিখ পদ্ধতি ব্যবহারের কথা। আমি তৎক্ষণাৎ ওই পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করে দিই।"
[আরও পড়ুন: পরিবারে অঘটন! পোশাক তৈরি করেও আম্বানিদের রিসেপশনে যাচ্ছেন না টোটা]
কী এই পদ্ধতি? কোনও কারণে খাবার বা তরল শ্বাসনালীতে চলে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীর সেটাকে কাশির (Cough)মাধ্যমে বের করে দেয়। যাকে আমরা বিষম লাগা বলি। কিন্তু সেই কাজ যদি শরীর না করতে পারে, তাকে বলে শ্বাসরোধ বা চোকিং। সেক্ষেত্রে ফুসফুসে হঠাৎ চাপ প্রয়োগ করে ফুসফুসে (Lungs) জমে থাকা বাতাসের ঠেলায় ওই কঠিন বস্তুকে বের করে ফেলা যায়। এই পদ্ধতির নাম হাইমলিখ (Heimlich) কৌশল। কিন্তু কলেজ পড়ুয়া বৃষ্টি কীভাবে এই পদ্ধতির কথা জানলেন? বলছেন, "আমি ২০২৩ সালে রাধানগর বোর্ড প্রাইমারি স্কুলে প্র্যাকটিস টিচিংএর জন্য গিয়েছিলাম। সেই সময় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌম্য সেনগুপ্ত মহাশয় আমাদের প্রত্যেককে হাতে ধরে এই কৌশল শিখিয়েছিলেন। আজ আমি ওনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আজ যদি আমরা এই জীবনদায়ী পদ্ধতি সম্পর্কে না জানতাম, তাহলে হয়তো মাকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখতে হতো।" বৃষ্টির আবেদন, সকলে এই পদ্ধতি শিখে রাখুন। বিপদে কাজে লাগবে।
[আরও পড়ুন: লিঙ্কন থেকে কেনেডি, মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বার বার নিশানা হয়েছেন আততায়ীদের]
আর যিনি এই কৌশল শিখিয়েছেন, সেই সৌম্য সেনগুপ্তর কথায়, "ডাক্তার হেনরি জে হাইমলিখ আবিষ্কৃত এই কৌশল আজ পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। সব ক্ষেত্রেই উদ্ধারকারীরা সাধারণ মানুষ! আমাদের তথা যুক্তিবাদী সমিতির নিরবিচ্ছিন্ন প্রচারে আমাদের পরিচিত ১৯ জনের জীবন বাঁচানোর কথা আমরা জানতে পেরেছি। এই ঘটনা নিয়ে ২০ জনের জীবন আমরা সকলে বাঁচাতে পারলাম। বিপদ তারণের তথা বিপদ তাড়ানোর জন্য প্রিয়জনের হাতে মাঙ্গলিক তাগা-তাবিজ বাঁধার থেকেও প্রিয়জনকে হাইমলিখ সিপিআরের মতো জীবনদায়ী পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া যে কতটা জরুরি, এই ঘটনা আবার আমাদের দেখিয়ে দিল।"