নন্দন দত্ত, সিউড়ি: শ্মশানে ফের অলৌকিক কাণ্ডের জিগিরে তারাপীঠ তোলপাড়! দাহ করার আগেই না কি প্রাণের স্পন্দন দেখা গিয়েছে দেহে! মুখাগ্নি করার সময় না কি কেঁপে উঠেছে হাত। এমনই গুজবে বৃদ্ধা সরস্বতী চক্রবর্তীর(৮০) মৃতদেহ (Dead Woman) নিয়ে টানাপোড়েন চলল শুক্রবার সারাদিন। শেষে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে সার্টিফিকেট দেওয়ার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় দেহ দাহ করা হয় তারাপীঠে। মৃতার নাতি কাজল চক্রবর্তী জানান, “শুধুমাত্র একটি গুজবের জেরে সারাদিন দিদাকে নিয়ে হয়রানির শিকার হতে হল আমাদের।”
তারাপীঠ বামদেব পল্লির বাসিন্দা সরস্বতী চক্রবর্তী বার্ধক্যজনিত রোগে গত তিনমাস ধরেই শয্যাশায়ী ছিলেন। বৃহস্পতিবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানীয় তারাপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার ভোর তিনটে নাগাদ নিজের বাড়িতেই মৃত্যু হয় সরস্বতীদেবীর। স্থানীয় চিকিৎসক দেখে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট দেন। সকাল ন’টা নাগাদ সেই সার্টিফিকেট নিয়েই তারাপীঠ শ্মশানে সরস্বতীদেবীকে দাহ করতে নিয়ে যায় চক্রবর্তী পরিবার। মুখাগ্নি করার সময় হঠাৎই আওয়াজ ওঠে, “বুড়ির হাত নড়ছে। জেগে উঠছেন সরস্বতী চক্রবর্তী।”
[আরও পড়ুন : রাজ্যের অষ্টম দফার ভোটে কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা ৫৫, সবচেয়ে বেশি কোন দলের?]
সেই গুজবে শ্মশানে ভিড় জমতে থাকে তারা মায়ের নামে ধ্বনি ওঠে। কারণ, কথিত আছে তারাপীঠে কাটা শোল মাছের পুর্নজন্ম হয়। মৃত বণিকের ছেলে জীবিত কুণ্ডের জলের স্পর্শে জেগে ওঠে। ভিড়ের মাঝে সেই জীবিত কুণ্ডের জল এনে মৃতদেহের গায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ভিড় সামাল দিতে শ্মশানে হাজির হয় তারাপীঠ থানার পুলিশ। করোনাবিধি মেনে ভিড় সরিয়ে দেওয়া হয়। ডাকা হয় স্থানীয় চিকিৎসক দেবাশিস চক্রবর্তীকে। তিনি এসে জানিয়ে দেন, অনেকক্ষণ আগেই মৃত্যু হয়েছে সরস্বতীদেবীর। কিন্তু সরকারি সার্টিফিকেট ছাড়া দেহ দাহ করতে বাধা দেয় পুলিশ।
পুলিশ দেহ তুলে নিয়ে যায় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, যেহেতু মৃত অবস্থায় হাসপাতালে দেহ আনা হয়েছে, তাই দেহের ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃতের সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে না। কিন্তু বেঁকে বসেন মৃতার পরিবার। তাঁরা জানান, আগের দিনই তারা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে দেখিয়েছেন। তার রিপোর্ট-সহ সরকারি টিকিট তাদের কাছে আছে। তারই ভিত্তিতে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিকেলে সরস্বতী দেবীকে মৃত বলে সার্টিফিকেট দেয়।