সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদির প্রথমবার ইজরায়েল সফরের প্রেক্ষিত অনেকটাই আলাদা। নানাবিধ কূটনৈতিক কচকচানি, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, বেশ কিছু চুক্তি, ইতিহাস, পরিসংখ্যান, তথ্যের ভারে বাস্তবিকই গুরুত্বপূর্ণ। তবু তারই মাঝে একটা ছোট্ট ঘটনা এই সফরকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিল। তিন দিনের ইজরায়েল সফরের দ্বিতীয় দিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দুই দেশের জন্য। ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিভলিনের সঙ্গে বৈঠক। পরে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও একাধিক চুক্তিপত্র স্বাক্ষর।এর পরেই ১১ বছরের একটা ছোট্ট জীবনের সঙ্গে মোদির সাক্ষাৎ এই আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক সফরের মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিল।
সফরসূচিতে ছিল। প্রতিশ্রুতি মতো দেখাও হল ২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাসের শিকার ছোট্ট মোসে হলৎসবার্গের সঙ্গে। এখন তার বয়স ১১। মুম্বই সন্ত্রাসে মাত্র দু’বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এখন ইজরায়েলের বাসিন্দা মোসে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ঠাকুমা-ঠাকুরদার হাত ধরে এসেছিল সে। ন’বছর আগে লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিরা নরিম্যান হাউজ-সহ মুম্বইয়ের একাধিক জায়গায় প্রাণঘাতী হামলা চালায়। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা ভারতের। নরিম্যান হাউস বা চাবাড হাউসে ২০০৮-এর ২৬ নভেম্বর রাতে লস্কর বাহিনীর সন্ত্রাসে ৬ জনের সঙ্গে নিহত হয়েছিলেন মোসের বাবা-মা রিভকা ও গ্যাভ্রিয়েল হোলৎসবার্গ। তাঁরা ছিলেন মুম্বইয়ে চাবাডের প্রতিনিধি। ঠাকুমার সঙ্গে সেদিন লুকিয়ে থেকে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছিল ছোট্ট মোসে।
[ভারত-ইজরায়েলের মধ্যে ৭টি চুক্তি, সন্ত্রাসবাদ দমনে হাতে-হাত]
অবশ্য মোদি ভোলেননি মোসের ভারতীয় ধাত্রী সান্ড্রা স্যামুয়েলসকেও। সেদিন রাতে সান্ড্রা গোলাগুলির মধ্যেই দু’বছরের শিশু মোসে ও তার দাদু-ঠাকুমা সিমন রোসেনবার্গ, ইহুডিট রোসেনবার্গকে নিয়ে কোনওরকমে পালিয়ে যান। নিজের জীবন তুচ্ছ করে মোসেকে বাঁচানোয় সান্দ্রাকে ২০১০-এর সেপ্টেম্বেরে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দিয়েছে ইজরায়েল। মোসে এখন ধর্মীয় স্কুলে যায়। জেরুজালেম থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে আফুলাতে বাস মোসের। সান্ড্রার সঙ্গে তার এখনও যোগাযোগ আছে। জেরুজালেমে কর্মরত সান্ড্রা সপ্তাহান্তে তাদের বাড়ি আসেন।
[২০২১ পর্যন্ত বার্সেলোনাতেই থাকবেন লিওনেল মেসি]
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছেন শুনে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ছিল মোসের পরিবার। তাদের প্রিয়জন হারানোর কষ্টে ভারতকে সমব্যথী হিসেবে পাশে পেয়ে খুশি তারা। সেই প্রতিক্রিয়া তারা ব্যক্তও করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে প্রধানমন্ত্রীকে নিজের দেশে স্বাগত জানায় মোসে। ভারতের নাগরিকদের শুভেচ্ছাবার্তা দিতেও ভোলেনি সে। তার মুম্বই আসার ইচ্ছের কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে মোসে। সন্ত্রাস নয়, আন্তরিকতার জন্য ভারতকে মনে রেখেছে মোসে। মনে রেখেছে এক ভারতীয় ধাত্রীর হাতে তার প্রাণ বাঁচার জন্য।
The post সন্ত্রাস নয়, মোসে ভারতকে মনে রাখবে বন্ধুত্বের জন্য appeared first on Sangbad Pratidin.