বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ফের অনলাইন গেম প্রাণ কাড়ল দুই যুবকের। কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে বসে অনলাইন গেম খেলতে গিয়ে মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল তাঁদের। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সন্ধ্যায় নদিয়া (Nadia) জেলার রানাঘাট (Ranaghat)-গেদে শাখার পাঁচবেড়িয়া ও বঙ্কিমনগর হল্ট স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায়।
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল? জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনের ওপর বসে মোবাইলে অনলাইন গেম খেলছিল আরিফুল ধাবক (২৫) ও বাপ্পা রাজ শেখ (২২) নামে দুই যুবক। সন্ধ্যের পরে রেললাইনের ওপরে বসে তাঁরা গেম খেলায় এতটাই ছিল মগ্ন, ডাউন লাইন দিয়ে ছুটে আসা ট্রেনটিকে খেয়ালই করেনি। অবশ্য গেম খেলার সময় ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন আসার কথা তাঁদের মাথাতেও আসেনি। এদিকে ডাউনলাইন দিয়ে আসা মালগাড়ির চালক লাইনে বসে থাকা দুই যুবককে দেখে বারবার হুইসেল বাজিয়েছিলেন। তাতেও অবশ্য বিন্দুমাত্র হুঁশ ফেরেনি তাঁদের। স্থানীয় কয়েকজন বিষয়টি খেয়াল করে চিৎকার-চেঁচামেচিও করেন বলে খবর। কিন্তু কানে হেডফোন থাকায় সেই চিৎকার ওই দুই যুবকের কানে ঢোকেনি। শেষে বাধ্য হয়ে রেললাইনের পাথরও ছোঁড়েন একজন। সেটা গায়ে লাগার পরই হুঁশ ফেরে তাঁদের। ততক্ষণে প্রায় একেবারে কাছে চলে এসেছিল ওই মালগাড়িটি।
[আরও পড়ুন: ভোটের ডিউটিতে গিয়ে ‘বিনা চিকিৎসায়’ মৃত্যু মহিলার, অব্যবস্থার অভিযোগ কমিশনের বিরুদ্ধে]
এই সময় দু’জনে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করলেও কারওর বুদ্ধি যে ওইমুহূর্তে সেইভাবে কাজ করেনি, সেটাও স্পষ্ট। কারণ রেললাইন থেকে পাশে সরে না গিয়ে তাঁরা বরং ট্রেনটিকে পিছনের দিকে রেখে লাইন ধরে ছোটার চেষ্টা শুরু করেছিল। কিন্তু ট্রেনের গতির কাছে তারা পেরে উঠেনি। মুহূর্তেই ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুজনের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রেল পুলিশ। পরে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যু দুই যুবকেরই বাড়ি ধানতলা থানার রঘুনাথপুর হিজুলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজাপুর গ্রামে। সম্পর্কে দুজনে বন্ধু। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আপ ও ডাউন, দু-লাইন দিয়েই ট্রেন চলাচল করে। শনিবার সময় তখন সন্ধ্যা ৭টার একটু বেশি। হাতে মোবাইল নিয়ে দুই বন্ধু রেললাইন ধরে কিছুটা হেঁটে গিয়ে প্রথমে আপ লাইনের ওপরে বসেছিল। কিন্তু সেই লাইনে ট্রেন চলে আসায় তাঁরা আপ লাইন থেকে উঠে ডাউন লাইনের ওপরে মুখোমুখি বসে। কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে অনলাইন গেম খেলছিল। গেম খেলায় তাঁরা এতটাই মগ্ন ছিল, ডাউন লাইন দিয়ে সেই সময় ট্রেন চলে আসতে পারে, এমন ধারণাই তাঁদের ছিল না। তাঁরা যখন গেম খেলতে ব্যস্ত, সেই সময় ডাউন লাইন দিয়ে তাঁদের দিকে ছুটি আসছিল রানাঘাটগামী ওই মালগাড়িটি। রেললাইনের ওপরে দুজনকে বসে থাকতে দেখে ট্রেনের চালক কয়েকবার হুইসেল বাজিয়েছিলেন। তাতেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। পারভিনা খাতুন নামে মৃতদের একজন আত্মীয় জানিয়েছেন, ‘মোবাইলে কী যেন একটা অনলাইন গেমের প্রতি ইদানিং তাঁদের খুব নেশা তৈরি হয়েছিল। বেশিরভাগ সময় কানে হেডফোন লাগিয়ে সেই গেম খেলত। সেই গেমই কেড়ে নিল দুজনের প্রাণ। সবরকম চেষ্টা করেও তাদের বাঁচানো গেল না।’