স্টাফ রিপোর্টার: ঠিক ছ’বছর আগে ডেঙ্গুর (Dengue) তাণ্ডব মনে করাচ্ছে এবারের ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ২০১৯ সালে মারমুখী চেহারা নেয় ডেঙ্গু। তবে ওই বছর বাদ দিলে মাঝের সময়কালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপের নিরিখে, এ বছরই সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বছরের ৩৬তম সপ্তাহ, অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই বিগত বছরগুলির তুলনায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মশাবাহিত এ রোগের সংক্রমণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেরি করে বর্ষা ও দফায়-দফায় বৃষ্টিপাত, করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের বেপরোয়া হয়ে ওঠা ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ। দ্বিতীয়ত, করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তর মশা দমন কার্যত অবহেলা করেছিল। তাই অসুখের প্রকোপ এমন মাত্রাছাড়া পর্যায়ে চলে গিয়েছে চলতি বছর। ফলে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে, মাত্র সাত দিনে যতটা বৃদ্ধি এবারে হয়েছে ডেঙ্গুর, ততটা বৃদ্ধি ২০১৯ ছাড়া গত ছ’বছরে আর হয়নি। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিভাগের আধিকারিকদের কথায় ডেঙ্গু যে মারমুখী চেহারা নিয়েছে, তা গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন জেলার পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই স্পষ্ট।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপি ধ্বংস চায়, ওদের দিকে দেখার দরকার নেই’, নবান্ন অভিযানের দিনই বার্তা মমতার]
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ১৮৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র সাত দিনে এত মানুষ আক্রান্ত একমাত্র ২০১৯-এই (২৯৬০) হয়েছিলেন। ২০১৭ ও ২০১৮-তে এই এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছিলেন যথাক্রমে ৮৪৪ ও ১৩০৪ জন। আবার করোনাকালে এই সংখ্যাটা আরও অনেকটা কমে গিয়েছিল। ২০২০ ও ২০২১-এ সেপ্টম্বরের প্রথম সপ্তাহের হিসাব বলছে, দু’বছরে যথাক্রমে সাতদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮৬ ও ১৪১। কিন্তু এ বছর সেটাই বেড়ে গিয়েছে প্রায় আট গুণ।
মহামারী বিশেষজ্ঞ দীপিকা শূর বলেন, “প্রতি বছর জুলাইয়ের শেষেই ডেঙ্গুর উৎপাত শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দেরিতে বৃষ্টির কারণে এবার সেটা শুরু হয়েছে অগাস্টের তৃতীয় সপ্তাহে।” তাঁর মতে, টানা মুষলধারায় সর্বত্র বর্ষণের বদলে যেহেতু বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় স্তরে, ডেঙ্গুুর বাহক মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা তাই ধুয়ে যাওয়ার বদলে জমেই থেকেছে এবং প্রচুর মশার জন্ম দিয়ে চলেছে। তার জেরেই অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গির সংক্রমণ বেড়েছে যা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সর্বাধিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
[আরও পড়ুন: বিজেপির নবান্ন অভিযান LIVE: শুভেন্দুর ‘গ্রেপ্তারি’র প্রতিবাদে হাই কোর্টে মামলা, সাঁতরাগাছি স্টেশনের বাইরে আগুন]
সহমত পোষণ করেছেন প্রবীণ বিশেষজ্ঞ অমিয়কুমার হাটি। তাঁর কথায়, “সবে শুরু। এমনটাই আপাতত চলবে। ডেঙ্গু বাড়ার সব উপকরণ মজুত। অক্টোবরের মাঝামাঝি হয়তো সংক্রমণের শিখর ছোঁবে। ডেঙ্গু কমতে কমতে এবার ডিসেম্বর।” স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটির কথায়, “স্বাস্থ্য ও পুরকর্মীরা করোনা মোকাবিলা এবং টিকাকরণ নিয়ে এতটা সময় দিয়েছেন গত তিন বছরে যে মশা দমনে তেমন সময় নেই বললেই চলে।” অমিয়বাবুর কথায়, “কলকাতা পুরসভা এবং কিছুটা উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি পুরসভা সেই ভুলটা করেনি বলেই তুলনায় সেই সব এলাকায় সংক্রমণের থাবা কম চওড়া।”
নাইসেডের এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসক দীপিকা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই ক’দিনের নিম্নচাপে যে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, তা মশার লার্ভা অনেকটাই ধুয়ে দেবে। ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহ ডেঙ্গুর প্রকোপ একটু হলেও কমবে। কিন্তু জমে থাকা জল দ্রুত সাফ না করা গেলে সংক্রমণটা ফের বাড়তে বাধ্য। তবে এ বছর যে ডেঙ্গু মৃত্যু কম হবে তা কিন্তু বলছেন জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।