‘গোলন্দাজ’ ছবির পর ফের একসঙ্গে বড়পর্দায় দেব (Dev) ও ইশা (Ishaa Saha)। এবার পুজোয় ‘কাছের মানুষ’ নিয়ে আসছেন দুই তারকা। নতুন ছবি রিলিজের আগে অন্তরঙ্গ আড্ডায় নানা কথা শেয়ার করলেন তাঁরা। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
দেব, আপনার কাছে ছবিটা সম্পর্কে জানতে চাই। ইশা, আপনি যদি আপনার চরিত্রটা নিয়ে কিছু বলেন।
দেব: এখন চারপাশে সুইসাইড হচ্ছে, সেলিব্রিটিদেরও সুইসাইড করতে দেখেছি। ছবির কেন্দ্রে রয়েছে এলআইসি এজেন্ট, জীবন এবং মৃত্যু নিয়ে টানাপোড়েন। মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ডিপ্রেসড হয়ে পড়ছে। এই বিষয়টা নিয়ে যদি একটা পজিটিভ কোনও গল্প বলা যায়, ‘কাছের মানুষ’ (Kacher Manush) তেমনই একটা গল্প। এই ছবি একেবারে আজকের ইয়ং জেনারেশনকে নিয়ে যারা রিফিউজাল সহ্য করতে পারে না, নানা বাধা পেরিয়ে উঠতে পারে না। তবে গল্পে অনেক টুইস্ট আছে সেটা ছবিটা না দেখলে বোঝা যাবে না।
ইশা: এই ছবিতে আমার নাম ‘আলো’। উত্তর কলকাতার একটি মেয়ে, যে খুব প্রাণোচ্ছল। কথা বলতে প্রচণ্ড ভালবাসে, মিশুকে। আর যেখানেই যায় আলোর রোশনাইয়ের মতো আনন্দ ছড়িয়ে দিতে পারে। ‘কুন্তল’-এর সঙ্গে ‘আলো’-র দেখা হয়, তারপর সমস্ত কিছু পালটে যায়।আলো এত কথা বলে যে, আমি ডাবিং করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছিলাম।
ইশা, আপনার তো একই সঙ্গে দু’টো ছবি রিলিজ। দুই প্রোডিউসারের চাপে কতটা চিড়েচ্যাপ্টা?
ইশা: এটা যদি প্রোডিউসার দেব এবং এসভিএফ না হয়ে অন্য কোনও দু’জন প্রোডিউসার হত চাপটা একই থাকত। পুজোয় দু’টো ছবি একসঙ্গে রিলিজ করছে এটা ভেবে যেমন খুব ভাল লাগছে, এনজয় করছি কিন্তু সেইসঙ্গে প্রচণ্ড চাপ। সেটা বলে বোঝাতে পারব না। আমি চাই দু’টো ছবিই চলুক। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব দু’টো ছবিকেই পুশ করছি।
পুজোতে ‘কাছের মানুষ’-এর সঙ্গে আরও কয়েকটা বাংলা ছবি রিলিজ করছে। কম্পিটিশনের চাপ কীভাবে সামলাচ্ছেন?
দেব: আমি তো জন্মেছি কম্পিটিশনের মধ্যে। গত বড়দিনে যখন কোনও বাংলা ছবি রিলিজ করার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি, আমি দেখিয়েছিলাম। প্যানডেমিকের পরে আমার তিনটে ছবিই ব্লকবাস্টার হয়েছে। তাই হল-এ কোন ছবি চলছে না সে সব নিয়ে ভাবি না। অন্যের ফেলিওর দেখে আমি আমার সাকসেস জাজ করি না। নিজের কনটেন্ট দিয়ে নিজের সাকসেস জাজ করি।
[আরও পড়ুন: গোলাপি শাড়ি, হাতে শাঁখা-পলা, বাঙালি সাজে মায়ের হাতে সাধ খেলেন হবু মা বিপাশা, দেখুন ভিডিও]
ইশার সঙ্গে ‘গোলন্দাজ’-এর পর ‘কাছের মানুষ’-এ আবার কাজ করলেন, কেমন লাগল?
দেব: ‘গোলন্দাজ’-এ একসঙ্গে কাজ করার পর আমার ওকে খুব ভাল লেগেছিল। এবং ইশা সবসময় সিরিয়াস চরিত্রে টাইপকাস্ট হয়ে এসেছে, তাই মনে হল, এই চরিত্রর জন্য ওকে মানাবে ভাল। আর এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, শি ইজ আ ফ্যান্টাস্টিক অ্যাক্টর। আর এই ছবিতে তো আমি বাদে সবাই অ্যাক্টর (হাসি)।
ইশা: এ আবার কী কথা! সবাই বলে, দেব ভাল অভিনেতা নয়। কিন্তু আমার উলটোদিকের অভিনেতা ঠিকমতো রিঅ্যাক্ট না করলে আমার কাজটা ভাল হবে কী করে? দেবের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ও প্রচণ্ড ডেডিকেটেড এবং প্রতিবার আমাকে ‘কিউ’ দিয়ে গিয়েছে। এটা অনেকেই করে না। কো-অ্যাক্টর হিসাবে আমি এই সাপোর্টটা দেবের কাছে থেকে সবসময় পেয়েছি। ফলে আমার মনে হয়, এই ছবিতে আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং আগের চেয়ে ভাল।
দেব: প্রত্যেক হিরোইনের সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি খুব ভাল। এবং ইশা অভিনেতা হিসাবে বুদ্ধিমান এবং ওর সঙ্গে কানেক্ট করা সহজ। তাই মনে হয়, আমাদের কেমিস্ট্রি আরও বেটার হয়েছে। দেব একজন সেলফ-মেড অ্যাক্টর এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের (Prosenjit Chatterjee) একটা লিগ্যাসি রয়েছে।
ইশা, এই ছবিতে এই দু’জনের সঙ্গে কাজ করে আপনার কেমন অভিজ্ঞতা?
ইশা: দেবের মধ্যে যে লেভেলের ডেডিকেশন আছে এবং সৎ চেষ্টা আছে সে কথা একটু আগেই বললাম। কেউ এমনি এমনি সুপারস্টার হয় না। আমার মনে আছে ‘গোলন্দাজ’-এর সময় নিজের জন্মদিনে, মধ্যরাত অবধি কাজ করে, জুনিয়র আর্টিস্টদের ‘কিউ’ দিয়ে তারপর দেব ফ্লোর ছেড়েছিল। বুম্বাদাকে নিয়ে যেটা প্রথম কথা বলতে চাই, সেটা হল ওঁর ধৈর্য। বুম্বাদা এখন এমন এক জায়গায়, চাইলেই ইচ্ছেমতো শুটিং করতে পারেন। সেই বুম্বাদা প্রায় বাইশ ঘণ্টা পর্যন্ত শুট করেছেন। এই ধৈর্যটা শেখার মতো। আমি সেট-এ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম কিন্তু বুম্বাদার আচরণে কোনও ক্লান্তির ছাপ নেই। শিল্পের প্রতি যে যত্ন এবং ডেডিকেশন সেটা দু’জনের থেকেই শেখার আছে।
দেব, ‘কাছের মানুষ’ ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আপনার তুরুপের তাস? না হলে কি অন্য ছবির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যেত না?
দেব: প্রোডিউসার হিসাবে আমার ছবির জন্য আমি সেরাটাই চাইব। যখন একই প্রোজেক্টে অভিনেতা এবং প্রোডিউসারও, সেই সময়ে আমার প্রোডিউসার সত্তাটা অনেক বেশি কাজ করে। তাই বুম্বাদার নামটা আমিই সাজেস্ট করেছিলাম। আসলে বুম্বাদা না হলে ছবিটা হত না। কারণ কুন্তল এবং সুদর্শনের মধ্য দিয়ে যে কথাগুলো বলানো হচ্ছে সেটা কনভিন্সিং হত না। এই ছবি চলাকালীন আমি অনেক রাজনৈতিক সমস্যার মধ্যে ছিলাম। সেই সময় বুম্বাদা আমাকে খুবই সাপোর্ট করেছে। আঠেরো-কুড়ি ঘণ্টা শুট করেছে। আই অ্যাম রিয়্যালি গ্রেটফুল টু হিম। আসলে অভিনেতা হিসাবে বুম্বাদার খিদেটা এখনও রয়ে গিয়েছে। এটা না থাকলে বড় হওয়া যায় না। আর আমার মধ্যেও খিদেটা আছে বলে ‘কাছের মানুষ’ প্রোডিউস করতে পেরেছি।