সুমিত বিশ্বাস ও টিটুন মল্লিক: জঙ্গলমহল (Junglemahal)নিয়ে ফের লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাওবাদীরা (Maoists)। যে কোনও সময় নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে। তার প্রমাণ মিলেছে মাওবাদী বনধে। যে বন্ধে বিপুল সাড়া মিলেছিল জঙ্গলমহলে। যে জঙ্গলমহলে দীর্ঘদিন মাওবাদীদের কোনও অস্তিত্ব খালি চোখে দেখা যায়নি, সেখানে এভাবে বনধের প্রভাব কিভাবে দেখা গেল? সূত্রের খবর, এই ঘটনাতেই টনক নড়ে পুলিশ ও প্রশাসনের। সন্দেহ জাগে, তাহলে কী তলে তলে ফের সংগঠনকে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছে মাওবাদীরা। জঙ্গলমহলে ফের নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে? নানা দিক থেকে খবর সংগ্রহের পরেই কেন্দ্রীয় সংস্থা রিপোর্ট তৈরি করে বলে জানা গিয়েছে।
তারপরই রাজ্য সরকারও সমস্ত পুলিশের ছুটি বাতিল করে দেয়। টানা ১৫ দিন তল্লাশির পাশাপাশি কড়া নজরদারি রাখার কথা বলা হয়। সেই কাজ কীভাবে হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে জঙ্গলমহলে গেলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি (DG)মনোজ মালব্য। তিনি ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় বৈঠক করেন। বিশেষত এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা উপর কড়া নজর রাখা এবং সতর্ক থাকার নির্দেশ দিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য।
[আরও পড়ুন: লগ্নির গন্তব্য বাংলাই, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সর্ববৃহৎ প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে ব্রিটেন]
রবিবার ঝাড়গ্রাম থেকে জঙ্গল মহলের সড়ক পথে বাঁকুড়া (Bankura) পুলিশ লাইনে আসেন তিনি। বাঁকুড়া পুলিশ লাইনের সভাকক্ষে ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সঞ্জয় সিংহ, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। ডিআইজি (বাঁকুড়া) সুনীল চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি এবং থানার ওসি, আইসিদের উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ডিজি জঙ্গলমহলে সম্প্রতি মাওবাদীদের নামাঙ্কিত পোস্টারিংয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কারা এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তা খুঁজে বের করে তাদেরকে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি। জঙ্গলমহলে চাকরিজনিত ক্ষোভ থেকে কেউ মাওবাদীদের নাম করে পোস্টারিং করছে কি না, তা দেখার জন্যও প্রতিটি থানার আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠক শেষে পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
পুলিশে চাকরি পাওয়ার দাবিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুরুলিয়ার (Purulia) বিভিন্ন থানা এলাকায় মাওবাদী পোস্টার পড়েছে। পুরুলিয়ায় বৈঠক করতে গিয়ে তার কারণ জানতে চাইলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। রবিবার বাঁকুড়া থেকে বৈঠক সেরে বিকেল পাঁচটার পর পুরুলিয়ায় পা রাখেন মনোজ মালব্য (Manoj Malvya)। বেলগুমা পুলিশ লাইনে গার্ড অফ অনার নিয়ে জেলার আইসি-ওসিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সঞ্জয় সিং, ডিআইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) সুনীল চৌধুরী, পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন। তবে এদিনের বৈঠকে গরহাজির ছিলেন ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ। এই জেলার জঙ্গলমহলে মাওবাদী পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, অপরাধ-সহ একাধিক বিষয়ে বৈঠক করেন। তবে বৈঠক শেষে একটি কথাও বলতে চাননি ডিজি মনোজ মালব্য। পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “এটা সাধারণ তদারকি বৈঠক। আইনশৃঙ্খলা, বিভিন্ন অপরাধ, মাওবাদী বিষয়ে আলোচনা হয়।”
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে এই জেলায় বিভিন্ন থানা এলাকায় সিপিআই (মাওবাদী) নামাঙ্কিত পোস্টার পড়ছে। যার অধিকাংশগুলি পুলিশে চাকরি চাওয়ার দাবি। তবে এই পোস্টারগুলির সবগুলির কিনারা না হলেও পুরুলিয়া জেলা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল, ওই পোস্টারের সবগুলি মাওবাদীদের নয়। এদিনই পোস্টারের বিষয়ে ডিজি সরাসরি ওসি-আইসিদের কাছে জানতে চান।
[আরও পড়ুন: স্বামী জেলে, বসিরহাটে পরপুরুষের সঙ্গে লিভ ইন নৃত্যশিল্পীর, পরিণতি মর্মান্তিক]
আসলে, রাজ্য সরকার কোনওভাবেই চায় না জঙ্গলমহলে আবার অতীতের দিন ফিরে আসুক। অভাব থেকে বনমহলের যুবক-যুবতীরা যাতে কোনওভাবেই আর বিপথে পরিচালিত না হয়। সেই কারণেই মাওবাদী পোস্টারে চাকরির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য পুলিশ। তবে রাজ্যের নীতি অনুযায়ী যারাই মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন তারা মূলস্রোতে ফেরার পর রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্রেফ চাকরির জন্য পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বেকার যুবকরাও এক বছর ধরে এই ধরনের পোস্টারিং করছেন। এই বিষয়গুলি খুঁটিনাটি জানতে চান ডিজি। এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে কতজনকে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল হোম গার্ড পদে চাকরি দেওয়া গিয়েছে, সেই সংখ্যা জানতে চান পুলিশের এই শীর্ষকর্তা। ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মাওবাদীদের কার্যকলাপ নিয়েও এদিনের বৈঠক হয়। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে আরও বেশি করে সমন্বয় বাড়ানোর পরামর্শ দেন মনোজ মালব্য।