সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘মশা মারতে কামান দাগা’ নয়। মশা মারতে ব্যাঙেদের ডাক পাঠিয়েছে ঢাকা (Dhaka) সিটি কর্পোরেশন। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া রুখতে গাপ্পি মাছ, হাঁস চাষ ও ড্রোন ব্যবহার করে মশা নিধনে ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ব্যাঙ (frogs) আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে নিয়ে আসা এসব ব্যাঙ নগরীর বিভিন্ন পুকুর ডোবা ও জলাশয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।প্রাথমিকভাবে ডিএসসিসির কয়েকটি জলাশয়ে এরই মধ্যে কিছু ব্যাঙ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই উদ্যোগ হাস্যকর। কারণ মাছ, হাঁস ও ব্যাঙ চাষ কখনও মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে না। পৃথিবীর কোনও দেশে এমন নজির নেই।
ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই মাছ ও হাঁস চাষের মাধ্যমে নগরীতে মশা (Mosquitoes) নিয়ন্ত্রণের কথা জানিয়েছিলেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাই নগরীর বিভিন্ন পুকুরে মাছ ও হাঁস ছাড়া হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই মাছ ও হাঁস উধাও হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুকুর ও জলাশয়ে অতিরিক্ত দূষণের কারণে সেগুলি মারা যায়। ডিএসসিসির এসব উদ্যোগে যখন কোনওভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, তখন এবার নতুন করে নগরীর পুকুর-ডোবাসহ জলাশয়গুলোতে ব্যাঙ অবমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের শিকার পুকুর ও জলাশয়ের জলে এই ব্যাঙ কতদিন বাঁচবে, তা নিয়ে খোদ সিটি করপোরেশনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
[আরও পড়ুন: ‘নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না’, হুঙ্কার মৌলবাদী সংগঠনগুলির]
এর আগে এসব পুকুর ও জলাশয়ে যেসব হাঁস ও মাছ ছাড়া হয়েছিল, তারা বেশিদিন বাঁচেনি। ডিএসসিসির এই উদ্যোগের বিষয়ে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘মশা দমনের জন্য ডিএসসিসি পাতিহাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছেড়ে ছিলেন। নতুন করে ১৫ হাজার ব্যাঙ আমদানি করছেন। তবে এখানে একটা কথা স্পষ্ট – পৃথিবীর কোথাও হাঁস ও ব্যাঙ দিয়ে কখনও মশা নিয়ন্ত্রণ হয়নি, হবেও না। হাঁস ও ব্যাঙের খাবার অন্য কিছু।’’
[আরও পড়ুন: মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশ পৌঁছলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষে]
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে (Bangladesh) ৩৭ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এই ব্যাঙের প্রত্যেকটির এক একটি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবন বা কক্সবাজার এলাকার ব্যাঙ যদি ঢাকায় এনে ছেড়ে দেওয়া হয় তা মারা যাবে। কিছু কিছু ব্যাঙ আছে খুবই দুর্লভ। সেগুলোও যদি এনে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর বড় ব্যাঙ মশার লার্ভা খায় না। তারা স্থলভাগে থাকে। তাদের ৯৯ শতাংশ খাবার হচ্ছে বড় খাবার। তারা ঘাস থেকে শুরু করে মাংস পর্যন্ত খায়। এই খাবার থেকে তারা অনেক ক্যালোরি পায়। কিন্তু একটা মশা থেকে কত ক্যালোরি পেতে পারে? খুব একটা বেশি না।’’