সুকুমার সরকার, ঢাকা: চকবাজারের রাসায়নিক গুদামের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে বেআইনিভাবে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক বেসমেন্ট থেকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারির রাতে আগুনে হাজি ওয়াহেদ মঞ্জিল নামে একটি ভবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ভবন এবং সংলগ্ন সমস্ত গুদাম থেকে রাসায়নিক সরাতে শুরু করেছে ঢাকার পুর কর্তৃপক্ষ।
মেয়র সাঈদ খোকন স্পষ্ট জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনের অভিযানের সময় কারও বাড়িতে অবৈধ রাসায়নিক মজুত আছে দেখলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওয়াহেদ মঞ্জিলের রাসায়নিকের গুদাম ঘুরে দেখেন মেয়র। এরপর দু’দফায় দুটি ট্রাক বোঝাই করে ওই কাঁচা সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়। চকবাজার থানার পরিদর্শক মহম্মদ মুরাদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে এসব রাসায়নিক দ্রব্য কেরানিগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প এলাকায় নিয়ে রাখা হবে। কারও বাড়িতে রাসায়নিকের মজুদের খোঁজ জানা থাকলে তা সিটি কর্পোরেশনের অফিস, কাউন্সিলরের অফিসে বা থানায় জানাতে অনুরোধ করেন মেয়র।
[সরকার চকবাজার ট্র্যাজেডির দায় এড়াতে পারে না, মন্তব্য হাসিনার মন্ত্রীর]
গত বুধবার রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ আগুনে ৮১ জনের মৃত্যু হয়। অগ্নিকাণ্ডের পর চুড়িহাট্টা মোড়ে রাস্তা থেকে পোড়া আবর্জনা সরিয়ে নিয়েছে সিটি করপোরেশন। চারটি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। আশপাশের ভবনগুলিতে নতুন করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জল সরবরাহ শুরু হয়েছে। চুড়িহাট্টা শাহি জামে মসজিদের দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব কোণে নতুন দু’টো খুঁটি বসাচ্ছে বিদ্যুতের লালবাগ বিভাগ। বুধবারের আগুনে ওই এলাকার মোট চারটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিকাদার আবুল কাসেম জানান, ‘আগের চারটি খুঁটি ছোট ছিল। এই দুটি খুঁটি বড়। তাই দুটি দিয়েই কাজ চলবে।’ দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রকের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকালে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। এই কমিটির আহ্বায়ক মহম্মদ আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি ভবিষ্যতের কার্যপদ্ধতি ঠিক করছেন তাঁরা। পাশাপাশি নিখোঁজদের একটি তালিকাও তৈরি হয়েছে। তদন্তের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়াহেদ ম্যানসনের দোতলায় প্লাস্টিকের দানা আর প্রচুর স্প্রে বোতল ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ এটা। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, এখানে রাস্তা সরু, এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। আগুন লাগার পর যানবাহন দ্রুত চলাচল করতে পারেনি। তাহলে রাস্তায় এত মানুষের মৃত্যু হত না।’
[মৃত্যুতেও একসঙ্গে, দগ্ধ দোকান থেকে উদ্ধার চার বন্ধুর মাথার খুলি]
দগ্ধ ও আহতদের দেখতে শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পুরনো ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। ঘনবসতি এলাকায় যেন আর রাসায়নিক না থাকে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাসায়নিকের ব্যবসা, গুদাম সরাতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পুরনো ঢাকার অলিগলি ও রাস্তাগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে দোষারোপ করেছেন শাসকদল আওয়ামি লিগের শরিক সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া। শনিবার বিকেলে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে চকবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে একথা বলেন তিনি। আমুর আগে দেশের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন দিলীপ বড়ুয়া। তাঁর অভিযোগ, ‘আমাদের যে শিল্পমন্ত্রী ছিলেন, উনি যদি রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরানোর বিষয়টি ভালভাবে নজর করতেন, তাহলে হয়তো এই দিন দেখতে হত না। ঢাকার রাসায়নিক গুদাম ভেঙে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সহজ হত।’
The post অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি ভুলে পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু ঢাকার চকবাজারে appeared first on Sangbad Pratidin.