কৃষ্ণকুমার দাস: ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির মামলা পুনর্বিচারের দাবি ঘিরে মঙ্গলবার থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজ্যের আইন দপ্তরে। ফাঁসির ২০ বছর পরে ওই মামলা কীভাবে ‘রি-ওপেন’ করা যায় তা নিয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখছেন সরকারি আইন বিশেষজ্ঞরা। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন মামলা এর আগে হয়েছে কিনা এবং কোন আইনি যুক্তিতে ফাঁসি বা মৃত্যুদণ্ডের পরেও মামলা নতুন করে শুনানি হয়েছিল তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া চলছে আইন দপ্তরে।
প্রসঙ্গত, সোমবারই বাঁকুড়ার ছাতনা থেকে ধনঞ্জয়ের গ্রামের বাসিন্দারা দলবেঁধে এসে কলকাতায় রবীন্দ্রসদন চত্বরে রাণুছায়া মঞ্চে পুনর্বিচার চেয়ে ধরনা দেন। দলে ছিলেন আইনজীবী থেকে শুরু করে কলকাতার বিশিষ্টরাও। নেতৃত্বে ছিলেন ড. চন্দ্রচূড় গোস্বামী ও জীবন চক্রবর্তী। পরে এই মঞ্চের সদস্যরা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে ডেপুটেশন দেন। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ধনঞ্জয় মামলার পুনর্বিচার চেয়ে একটি চিঠিও জমা দিয়েছেন মঞ্চের সদস্যরা। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকেও চিঠি দিয়েছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চ।
রাজ্যের আইন দপ্তর সূত্রে খবর, ফাঁসি হয়ে যাওয়ার ২০ বছর পরেও কীভাবে, কোন সূত্র ধরে মামলা ‘রি-ওপেন’ করা যায় তা নিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবীদের মতামত নিচ্ছেন সরকারি অফিসাররা। খবর নেওয়া হচ্ছে, সেইসময় কোন আইনজীবীরা এই মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ৫ মার্চ ভবানীপুরের আনন্দ অ্যাপার্টমেন্টে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে বাঁকুড়ার ছাতনার কুলুডিহি গ্রামের বাসিন্দা ও ওই আবাসনের নিরাপত্তাকর্মী ধনঞ্জয়কে গ্রেপ্তারের পর বিচারের মাধ্যমে ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট ফাঁসি হয়।
বাঁকুড়ার ছাতনার বাসিন্দা ও এই মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক জীবন চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, ‘‘ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কোনও অকাট্য যুক্তি ও তথ্য না থাকা সত্ত্বেও একটি প্রভাবশালী পরিবারের কথায় বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশের তদন্তে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস, মামলা রি-ওপেন হলে ধনঞ্জয় নির্দোষ প্রমাণিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে।’’ মঞ্চের আহ্বায়ক চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি করেছি, ধনঞ্জয় মামলা নিয়ে সিবিআই তদন্ত হোক। সিবিআই তদন্ত হলে প্রকৃত দোষী শাস্তি পাবে এবং নির্যাতিতার আত্মা শান্তি পাবে। আর ছাতনার উপর থেকে ধর্ষকের গ্রাম অপবাদ মুছে যাবে। তাই আমরা চাইছি, অবিলম্বে ধনঞ্জয় মামলা নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হোক।’’