ডায়াবেসিটি! অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে ডায়াবেটিস… এই যৌথ সমস্যার সমাধানে সফল চিকিৎসা সার্জারি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন পিয়ারলেস হসপিটালের বিশিষ্ট বেরিয়াট্রিক ও অ্যাডভান্সড ল্যাপারোস্কপিক সার্জন ডা. সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য।
অনেকেই স্বাভাবিক মনে করে উপেক্ষা করে। নিয়ন্ত্রণ থাকে না জীবনযাপনে। সাবধান! এই স্থূলতাই নানা সমস্যা বা অসুখের মূল সূত্রপাত। যার মধ্যে অন্যতম হল ডায়াবেটিস। শরীরে অতিরিক্ত মেদ থাকলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। এবং এই দুই সমস্যার জুটিকে ‘ডায়াবেসিটি’ বলা হয়। এর প্রধান কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। সহজ কথায় বললে, অগ্ন্যাশয় থেকে যে ইনসুলিন নিঃসরণ হয় সেটা শরীর সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে না। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। এছাড়াও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের কারণে ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, পলিসিস্টিক ওভারি থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সবকিছুর পিছনেই রয়েছে ওবেসিটি। তাই চিকিৎসা করে যদি ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাহলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আয়ত্তে চলে আসে। ফলে ডায়াবেটিসও কন্ট্রোল করা সম্ভব।
অন্য চিকিৎসা
ডায়াবেসিটি চিকিৎসা অসুখটার মতই জটিল। এর চিকিৎসা সাধারণত একদল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ডায়াটেশিয়ান, ফিটনেস ট্রেনার, বেরিয়াট্রিক সার্জন করেন। কারণ ওষুধ ছাড়াও এই জোড়া অসুখকে বাগে আনতে সঠিক খাওয়া-দাওয়া, শরীরচর্চা ভীষণ জরুরি। কিন্তু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের বেরিয়াট্রিক সার্জারি ছাড়া এই অসুখ বাগে আনা সম্ভব নয়। তবে বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরামর্শ তখনই দেওয়া হয়, যখন অন্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যর্থ হয়ে যায়। ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি অর্থাৎ ডায়াবেসিটি আক্রান্তরা ডায়েট মেনে খেয়ে, যোগ-ব্যায়াম করে জীবনযাপনের ধারার আমুল পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগ প্রতিহত করতে পারেন। সঙ্গে ওষুধ সাহায্য করে ভাল থাকতে। তবে যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩৫-এর ঊর্ধ্বে তাদের জন্য সুস্থ জীবনে ফেরার একমাত্র উপায় বেরিয়াট্রিক সার্জারি।
[আরও পড়ুন: প্রেগন্যান্সিতে কাঁটা ডায়াবেটিস? সমাধানের পথ বাতলালেন বিশেষজ্ঞ ]
ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস ফ্রি
এই মুহূর্তে ডায়াবেসিটিতে আক্রান্তদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফেরার নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যাচ্ছে বেরিয়াট্রিক সার্জারিতে। একমাত্র এই চিকিৎসা করেই ডায়াবেটিস মুক্ত জীবন ফিরে পাওয়া যায়। কোনও ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারানো যায় না। কিন্তু বেরিয়াট্রিক সার্জারি করে হাই ব্লাড সুগারের ঝামেলা থেকে মুক্তির সম্ভাবণা অনেক গুণ বেশি পাওয়া যায়। এই চিকিৎসায় অপারেশন করার পর ৭৮ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস পুরোপুরি সেরে গিয়েছে। ৯০ শতাংশের ডায়াবেটিস আগের চেয়ে ঢের গুণ ভাল অবস্থায় চলে আসে। এর অর্থ প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর ওষুধ ছাড়াই রোগীর ব্লাড সুগার লেভেল নর্মাল থাকে।
অপারেশন ভয়ের নয়
এটি আসলে ল্যাপারোস্কোপিক বা মাইক্রো সার্জারি। রোগীর পাকস্থলি বা অন্ত্র অর্থাৎ ইনটেস্টাইনে অপারেশন করে কিছু পরিবর্তন করা হয়। এই অপারেশন ভীষণ নিরাপদ এবং অপারেশনের পর দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব। এমনকী সার্জারির দিনই রোগী হাঁটতে পারেন। অপারেশনের মাস কয়েকের মধ্যেই রোগীর ওজন দ্রুত কমতে থাকে। রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রাতেও দ্রুত পরিবর্তন আসে। সার্জারির দিন কয়েক পরেই বেশিরভাগ রোগীর ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অন্ত্র থেকে নিঃসৃত হরমোনের পরিবর্তনই এই উন্নতির অন্যতম কারণ। এছাড়া সংযতভাবে সুষম খাদ্যগ্রহণ ও ওজন কমার কারণে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও কমে যায়। অন্য কোনও চিকিৎসা পদ্ধতি এতগুলো দিকে এভাবে একসঙ্গে কার্যকরি হয় না। তাই বলতে দ্বিধা নেই, এই মুহূর্তে ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির চিকিৎসায় সার্বিকভাবে সবচেয়ে ভাল ফল দিচ্ছে বেরিয়াট্রিক সার্জারিই। ডায়াবেটিস শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, কিডনি অকেজো, পায়ের নার্ভে সমস্যা, রক্তবাহতে ফ্যাট জমে হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাওয়ায় রোগী হাঁটাচলা-কাজকর্মে অনেকবেশি সক্রিয় হয়ে যায়। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে মানসিকভাবেও অনেক বেশি সুস্থ থাকেন।
তাই যাঁরা ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি দু’টি অসুখেই ভুগছেন তাঁরা জীবনটা আরও ভালভাবে উপভোগ করার জন্য চিকিৎসা হিসেবে বেরিয়াট্রিক সার্জারিকে বেছে নিতে পারেন। দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য এই সার্জারি অনেক নিরাপদ ও খরচও তুলনামূলক কম।
[আরও পড়ুন: সাবধান! মা-বাবার থেকে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে থাবা বসাতে পারে ডায়াবেটিস ]
The post ওবেসিটি + ডায়াবেটিস= ডায়াবেসিটি, শরীরে বাসা বাঁধলে সাবধান! appeared first on Sangbad Pratidin.