সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চতুর্দিকে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ৷ মেঘের চাদর সরিয়ে কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো কখনও সামান্য উঁকি দিচ্ছে সূর্য৷ পাহাড়ের বুক চিরে অঝোর ধারায় নামছে ঝরনা৷ ইস্ট খাসি হিলের রংযাইরতেহ গ্রামের নোহকালিকাই ঝরনার অপরূপ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক৷ স্থানীয়দের দাবি, শুধু সৌন্দর্যই নয় নোহকালিকাই ঝরনার নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে যন্ত্রণার কাহিনি৷ সেই কাহিনি শুনে আনন্দের মাঝেও চোখে জল আসে পর্যটকদের৷
খাসিদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ৷ বিয়ের পর সাধারণত স্বামী ঘরকন্না করতে চলে আসেন স্ত্রীর বাড়ি৷ অর্থ উপার্জনের দিকটি মূলত সামলান মহিলারা৷ বাড়ির কাজ দেখভাল করেন স্বামী৷ সমাজের নিয়ম মেনে বেশ সুষ্ঠু জীবন চলছিল রংযাইরতেহ গ্রামের বাসিন্দা লিকাইয়ের৷ তবে বেশিদিন সুখ স্থায়ী হল কই? মাত্র ১৯ বছর বয়সে স্বামীহারা হলেন লিকাই৷ এক সন্তানকে নিয়ে শুরু হল বৈধব্য যাপন৷ জঙ্গলে কাঠ বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেই মা-মেয়ের সংসার চালান লিকাই৷ ইতিমধ্যেই এক যুবকের মনে দাগ কাটলেন লিকাই৷ কিন্তু মেয়ে থাকায় দ্বিতীয়বার আর ঘর বাঁধতে রাজি হননি একলা মা৷ তবে ওই যুবকের অসীম ধৈর্য৷ ভালবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য যেন সব কিছুই করতে পারেন তিনি৷ তাই তো লিকাইয়ের চোখে আবারও সাজানো সংসার গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনতে লাগলেন ওই যুবক৷ বেশ কয়েকদিন পর রাজি হয়ে যান লিকাই৷ আবারও বিয়ে করলেন তিনি৷ সামাজিক রীতি অনুযায়ী লিকাইয়ের বাড়িতে এসে সংসার করতে শুরু করল যুবক৷
[ আরও পড়ুন: জুনেই তুষারপাত! অভিনব দৃশ্য দেখতে কাশ্মীর ছুটছেন পর্যটকরা]
দিনে লিকাই কাজ করেন৷ আর মেয়েকে সামলান ওই যুবক৷ রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে নিয়ে সময় কাটতে থাকে লিকাইয়ের৷ প্রথম কয়েকদিন বেশ ভালই লাগছিল তার৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীকে একা চেয়েও পাশে পাননি যুবক৷ তবে তার জন্য লিকাইয়ের মেয়েকে দায়ী করতেন তিনি৷ রীতিমতো আক্রোশ তৈরি হয়ে যায়৷ লিকাই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেই একরত্তিকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করত যুবক৷ যদিও তা ঘুণাক্ষরে টের পাননি লিকাই৷ একদিন কাজ সেরে বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে পাননি তরুণী৷ হাজার খোঁজখবর করতে করতেই দিব্যি মাংস দিয়ে ভাতও খেয়ে ফেলেন লিকাই৷ এরপর পান সাজতে বসেন৷ কিন্তু ওই কাজ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ লিকাইয়ের৷ দেখছেন পানের বাটা থেকে বেরচ্ছে কাটা আঙুল৷ মায়ের মনে কু ডেকে ওঠে৷ এ আঙুল যে মেয়ের ছাড়া কারও নয়, তা বুঝতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট৷
[ আরও পড়ুন: শিকেয় সমুদ্র দর্শন, দ্বিগুণ ঘরভাড়া দিয়েও হোটেল মিলছে না দিঘায়]
ইতিমধ্যেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন লিকাইয়ের দ্বিতীয় স্বামী৷ পাহাড়ের কোল থেকে তাকে টেনে বের করে আনেন গ্রামবাসীরা৷ নিজে মুখে লিকাইয়ের স্বামী স্বীকার করে কেবলমাত্র আক্রোশের বশেই মেয়েকে খুন করে সে হাড় ফেলে দেয় ওই ঝরনায়৷ মেয়ের মাংসই মাকে রান্না করে খাওয়ায় সে৷ তবে এত কিছুর মাঝে আঙুলটি ফেলতে ভুলে যায়৷ তাই খুনের কথা টের পেয়েছে লিকাই৷ একথা শুনে শোকে পাথর হয়ে যান সন্তানহারা মা৷ কারও কথা না শুনে দৌঁড়ে যান ঝরনার কাছে৷ সেখানেই ঝাঁপ দেন তিনি৷ আর কেউই লিকাইকে খুঁজে পাননি৷ তারপর থেকে লিকাইয়ের নাম অনুযায়ী ওই ঝরনার নাম হয়েছে নোহকালিকাই৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, ঝরনার জলেই যেন অমরত্ব লাভ করেছেন লিকাই৷
The post চেরাপুঞ্জির এই ঝরনার নামকরণের ইতিহাস জানলে চোখে জল আসবে পর্যটকদের appeared first on Sangbad Pratidin.