সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুন প্রথম জ্বলে অসমে। তারপর দ্রুত তা ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে। ধীরে ধীরে দেশের একাধিক রাজ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে। তা সে রাজধানী দিল্লিই হোক বা বাংলা, উত্তরপ্রদেশই হোক বা অন্য কোনও জায়গা। বিক্ষোভ সামাল দিতে যখনই ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন, তখন একটাই অস্ত্র প্রয়োগ হয়েছে দেশে। তা হল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া। ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত হওয়ার পর থেকে ১৩০ দিনেরও বেশি অতিক্রান্ত। কাশ্মীর উপত্যকায় বন্ধ ইন্টারনেট। CAA বিরোধী অশান্তির জন্যও এই হাতিয়ারই প্রয়োগ করেছে রাজ্য প্রশাসনগুলি। আর সেই কাজই দেশকে লজ্জার শীর্ষে তুলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমীক্ষা বলছে, ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘটনায় ২০১৮ সালে বিশ্বে প্রথমে রয়েছে ভারত।
ইন্টারনেট বিষয়ক সংস্থা Access Now -এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বছর ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘটনায় বিশ্বের তুলনায় ভারতে ৬৭ শতাংশ। চিন বা উত্তর কোরিয়ার মতো দেশেও এত বেশি সময়ের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়নি। প্রসঙ্গত, অসমে অশান্তি শুরু হওয়ার পর রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করার জন্য CAB-বিরোধী বিক্ষোভে প্রলেপ দিতে আসরে নামতে হয় খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। টুইট করে অসমবাসীকে মোদি আশ্বস্ত করেন যে, তাঁদের কোনও অধিকার নতুন এই সংশোধনী বিল কেড়ে নেবে না। কিন্তু সমস্যাটা হল, প্রধানমন্ত্রী যখন অসমবাসীর উদ্দেশে এই আশ্বাসবাণী দিলেন, ততক্ষণে অসমে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যবাসী সেই আশ্বাসবাণী দেখতেই পারেননি সোশ্যাল মিডিয়ায়।
[আরও পড়ুন: ২৭ কোটি গ্রাহকের তথ্য ফাঁস, দায় ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া ফেসবুক]
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ২০১২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশে ৩৭৩টি এমন ঘটনা হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধ রাখার। শুধুমাত্র এবছরই ৯৫টি এমন ঘটনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। সবচেয়ে বেশি এখানেই বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট। ২০১২ থেকে এখনও পর্যন্ত ১৮০টি এমন ঘটনা ঘটেছে ভূস্বর্গে। অনেক সময় আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা ব্যতীত কারণেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে এ দেশে। রাজস্থানে বোর্ড পরীক্ষার সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এমনটা অনভিপ্রেত। এই সমীক্ষা আরও বেশি লজ্জার কারণ, তালিকায় দুই নম্বরে থাকা দেশ পাকিস্তান, যেখানে মাত্র ১২টি এমন ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ইন্ডিয়া ডিজিটাল সামিটে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এমন এক ডিজিটাল ভারতের স্বপ্ন তিনি দেখেন যেখানে তথ্য জানার জন্য কোনও বাধা থাকবে না। অথচ সেই দেশের মানুষই ইন্টারনেট পরিষেবা বারবার বিঘ্নিত হওয়ার কারণে জ্ঞান আহরণের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের এহেন দাওয়াই ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশের মানুষের অধিকার হরণ করছে, যা আরও অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দেশকে।
The post ধাক্কা ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র! ইন্টারনেট বন্ধে বিশ্বে শীর্ষে ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.