রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু মজুমদার: বঙ্গ বিজেপির (BJP)অন্দরে বিদ্রোহ অব্যাহত। রাজ্য বিজেপির শাসক শিবিরের তিন-চারজন নেতার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতারা। একুশের নির্বাচনে (WB Assembly Election 2021) পরাজয়ের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাঠগড়ায় তুলেছেন দল থেকে সাময়িক সাসপেন্ড হওয়া দুই নেতা রীতেশ তিওয়ারি ও জয়প্রকাশ মজুমদার। এই পরিস্থিতিতে প্রবল অস্বস্তিতে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীরা। আর ঠিক এই সময়েই দলকে আরও অস্বস্তিতে ফেলে আত্মসমালোচনায় মগ্ন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর তাঁর মন্তব্যে তুমুল আলোড়ন দলের অন্দরে।
শনিবার হুগলিতে (Hooghly) সাংগঠনিক বৈঠকে আত্মসমালোচনার সুরে দিলীপ ঘোষ বলেন, “বাংলায় বিজেপি বাড়তে পারেনি। হয়তো নেতার অভাব রয়েছে। বাংলার মানুষ যে ধরনের রাজনীতি পছন্দ করে, আমরা রাস্তায় নেমে সে রকম লড়াই করতে পারিনি।” কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্য বিজেপির বিদ্রোহী নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারও বলেছিলেন, ”মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম আমল থেকে মাঠে লড়াই করেছেন। আর বিজেপি থাকে কোর্টে।” তার ক’দিন পরেই এদিন দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রাস্তায় নেমে বিজেপি লড়াই করতে পারেনি।
দলের একাংশ মনে করছে, দিলীপবাবুর এই আত্মসমালোচনায় যথেষ্ট অস্বস্তির মুখে পড়েছেন দলের বিক্ষুব্ধ শিবিরের আক্রমণে বিদ্ধ সুকান্ত-অমিতাভরা। শনিবার ভদ্রেশ্বর পুরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে এক সাংগঠনিক সভায় বিজেপির দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ বিজেপির সঙ্গে আছে। তাই ৭০ বছর পরে বিজেপিকে মানুষ বিশ্বাস করেছে। কিন্তু তারপরই তাঁর মুখে শোনা যায় দলের ব্যর্থতার বিষয়টি। পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ কর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, এক-আধবার লোকসভা, বিধানসভায় জেতা যায়। তাই যতক্ষণ না পুরসভা-পঞ্চায়েতে জেতা যাবে, ততক্ষণ ওই জেতার কোনও স্থায়িত্ব নেই।
[আরও পড়ুন: ‘বিজেপির রাজ্য সভাপতি ভাল’, সুকান্ত মজুমদারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ অনুব্রত মণ্ডল]
অন্যদিকে, বেসুরো বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় (Joy Banerjee)জানিয়েছেন, গোয়ার নির্বাচন মিটলে তারপর তিনি তৃণমূলে (TMC) যোগদান করবেন। সম্ভবত ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি যোগদান করতে পারেন। একদা বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য জয় শনিবার জানান, “তিনি তৃণমূলের ঘরের ছেলে। ২০১৪ সালে দিগভ্রষ্ট হয়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। বিজেপি দল নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে। সার্কাস পার্টি। বাঙালির আবেগ বোঝে না।” যতদিন বাঁচবেন আগামী দিনে তৃণমূল দলই করতে চান বলে জানান জয়। এদিন সল্টলেকে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখাও করেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, “ওঁর যাত্রা শুভ হোক। তবে একজন বিজেপির সদস্যও যদি চলে যান সেটা কাম্য নয়।”
এদিকে, হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগ শনিবার একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে গিয়ে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের হাত থেকে সংবর্ধনা নেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সুবীরবাবু বলেন, তিনি ওই ক্লাবের সদস্য। যদিও নিজের দলের প্রতি এদিন বেসুরো সুবীর নাগের বক্তব্য, ”বিজেপি আমায় বঞ্চিত করেছে।” সোমবার থেকে সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের মুখ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর দিল্লি যাচ্ছেন অধিবেশনে যোগ দিতে। বিক্ষুব্ধ শিবিরের এক নেতা জানিয়েছেন, বাজেট অধিবেশনের সময়ই অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডার সঙ্গে বাংলায় দলের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে কথা হতে পারে শান্তনু ঠাকুরের।