সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শরৎ মেঘের ফাঁকে একচিলতে রোদ, কাশের শুভ্রতা, শিউলির গন্ধমাখা আগমনির আবহ যেন সম্পূর্ণ করে তোলে ঢাকের বোল। ওই শব্দ ছাড়া তো দেবী দুর্গার আরাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শুধু তো বাংলাতেই নয়, বাংলার ঢাকিদের (Dhaki) চাহিদা তো রয়েছে অন্যান্য রাজ্যেও। প্রতি বছর পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকিরা যান দেশের নানা প্রান্তে।কিন্তু এ বছর তো ব্যতিক্রম। করোনা আবহে বাইরে যাওয়া কম ঝক্কির নয়। তাই এবার পুজোর (Durga Puja) আগে খানিকটা বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল ঢাকির দল। তবে তাদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঢাক সঙ্গে নিয়ে যে যেখানে যেতে চান, সেখানে তাঁদের পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের এই উদ্যোগে ভারী খুশি ঢাকিরা।
পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan) জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ঢাকিরা বিহার, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশে প্রতি বছরই ডাক পান। আবার কেউ কেউ পাটনা, মুম্বই, পুণে, বেনারসে গিয়ে হাজির হন। ভিনরাজ্যে পুজোর চার-পাঁচদিন ঢাক বাজিয়ে এক এক জন ঢাকি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা রোজগার করেন। কিন্তু করোনা কালে নিয়মিত রেল পরিবহণ না পেয়ে ভিনরাজ্যে যাওয়ার বিষয়টি বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছিল তাঁদের কাছে।
[আরও পড়ুন: থিমের আড়ম্বর নয়, এবার সমাজসেবা করেই উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের সেরা পুজো]
তাঁদের কষ্ট দূর করে সেই সব ঢাকিদের পাশে দাঁড়াল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকিদের এই সমস্যার কথা জানতে পেরেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও, মহকুমা শাসকদের ঢাকিদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়। যাঁরা ভিনরাজ্যে বা রাজ্যের দূরতম কোনও এলাকায় পুজোয় ঢাক বাজাতে যেতে চাইলেও তে পারছেন না, তাঁদের বিস্তারিত তথ্য নিতে বলা হয়েছে।
মূলত ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকার কারণে ভিনরাজ্যে যেতে সমস্যায় পড়ছেন ঢাকিরা। জেলাশাসক বলেন, “কোনও ঢাকি এই ধরনের সমস্যায় পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও, মহকুমা শাসক বা জেলাশাসকের দপ্তরে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের পরিবহণের ব্যবস্থা করে দেবে প্রশাসন।” জেলাশাসক জানিয়েছেন, ঢাকিদের ভিনরাজ্যে পুজোর আগে পৌঁছে দিকে রেলের সঙ্গে কথা বলে টিকিটের ব্যবস্থা করা হবে।
[আরও পড়ুন: ‘দূর হোক করোনা’, মহামারী আবহেও একই আয়োজনে পুজো হবে মালদহের এই বনেদি পরিবারে]
জেলার মন্তেশ্বর, কালনা, খণ্ডঘোষ-সহ বিভিন্ন ব্লকে প্রচুর সংখ্যায় ঢাকি রয়েছেন। যাঁদের অনেকেই বংশ পরম্পরায় বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে ঢাক বাজান। চলতি বছর কোভিড (Coronavirus) পরিস্থিতির জন্য তা প্রাথমিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলেও প্রশাসন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোয় খুশি এই লোকশিল্পীর দল। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ায় তাঁরা খুবই উপকৃত হবেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও পুজোয় সংসারের জন্য কিছু রোজগার করতে পারবেন। আর এই সুখবর শোনার পর ঢাকিমহলের জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। ঢাক ভাল করে বেঁধে চলছে মহড়া।
ছবি: মোহন সাহা।