গৌতম ব্রহ্ম: টেলরমেড অ্যান্টিবায়োটিক (Tailormaid Antibiotic)! রোগজীবাণু ধ্বংসের মারণাস্ত্র। আইসিইউয়ে মজুত নাছোড় জীবাণুর ছোবলে বহু রোগীর প্রাণ ঝরে যায়। প্রাণঘাতী এই সব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কোনও ওষুধ কাজ করে না। এমন ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ শত্রু নিধনে এবার ব্রহ্মাস্ত্রের হদিশ মিলল।
বাজার চলতি পলিমিক্সিনের কিছু অংশ কাঁটছাট করে এমন একটি অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা, যা দুর্ধষ্য ক্লেবসিয়েল্লা, সিউডোমোনাস, অ্যাসিনেটোব্যাকটর গ্রুপের জীবাণুকেও নিকেশ করতে সক্ষম। তা-ও আবার কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই! আইসিইউয়ে থাকা রোগীরা হামেশা হাসপাতাল-সৃষ্ট সংক্রমণে আক্রান্ত হন, যেটা চিকিসকদের কাছে বিড়ম্বনার, চ্যালেঞ্জের তো বটেই। এই ‘নসোকমিয়াল ইনফেকশন’-এর জন্য মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ক্লেবসিয়েল্লা, সিউডোমোনাস, অ্যাসিনেটোব্যাকটর গ্রুপের জীবাণু দায়ী। এদের বিরুদ্ধে কার্যকরী অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওষুধ-পলিমিক্সিন বি এবং কলিস্টিনও অনেক ক্ষেত্রে কাজে আসে না। তখন রোগীকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হয়। উপরন্তু এই ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম নয়। যেমন কিডনি বিকল হওয়া।
[আরও পড়ুন: যে কোনও বয়সে হতে পারে স্ট্রোক, কীভাবে বুঝবেন এর লক্ষণ?]
অর্থাৎ শাঁখের করাত। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই শুরু হয় গবেষণা। যার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টনি ভেলকভ এবং মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ান লি। সম্প্রতি ওঁদের গবেষণালব্ধ ফল প্রকাশিত হয়েছে নেচার কমিউনিকেশন জার্নালে। গবেষণাপত্রটি উদ্ধৃত করে মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, পলিমিক্সিনের গঠনের কিছু অংশ নিয়ে পরীক্ষাগারে কৃত্রিমভাবে দু’টি লিপোপেপটাইড তৈরি করা হয়েছে, যাতে পলিমিক্সিন ও কোলিস্টিনের মতো জীবাণুনাশী ক্ষমতা মজুত, আবার নেফ্রো-টক্সিসিটির বিপদ থাকছে না। ফলে ওষুধটি মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে। আশাবাদী ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞরা।
টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালের ডা. শুভব্রত পালের কথায়, “এই সব নাছোড় জীবাণু আমাদের লড়াইটা অনেক কঠিন করে তুলেছে। কিছু ক্ষেত্রে পলিমিক্সিন ও কোলিস্টিনের ডোজ হেরফের করে এবং দু’টি ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে সুফল পেয়েছি। নতুন কোনও মডিফায়েড ড্রাগ হাতে এলে আমাদের অসহায়তা অনেক কমবে।” চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ, এই গবেষণাপ্রাপ্ত নতুন ওষুধ অচিরেই আইসিইউয়ের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন দিশা দেখাবে ও মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে রোগীদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাবে।