পায়ে ব্যথা নিয়ে মাথা ব্যথা প্রায় অধিকাংশ মহিলারই। হাঁটতে গেলেই ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। বয়সের গন্ডি ৪৫ পেরলেই ঘরে ঘরে হাঁটু ব্যথার সমস্যা। কারণ চিনিয়ে ভালো থাকার উপায় বললেন অর্থপেডিক ডা. কিরণ মুখোপাধ্যায়।
বর্তমানে মহিলাদের মধ্যে হাঁটু ব্যথার প্রবণতা খুব বেশি। পায়ে ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন না এমন ৫০ ঊর্ধ্ব মহিলা খুঁজে পাওয়া প্রায় মুশকিল। কারণ মহিলাদের মধ্যে হাড়ের ক্ষয়ের প্রবণতা সর্বাধিক। যার ফলে আর্থ্রাইটিসে (Arthritis) এখন আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। মেয়েদের ৪০ বছর বয়সের পর ও পুরুষদের ক্ষেত্রে ৭০ বছর বয়সের পর এই ক্ষয় দেখা যায়।
কেন হয়?
বয়স, দৈর্ঘ্যের অনুপাতে শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধুমপান, ব্যায়াম, অনেকক্ষণ একই জায়গায় একইভাবে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা, অতিরিক্ত সিঁড়ি ভাঙা, পর্যাপ্ত পরিশ্রমের অভাব, সবকিছুই অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর। এক্ষেত্রে শরীরে কী হয় জানুন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে। মেনোপজের পর রক্ষাকবচ হরমোন ইস্ট্রোজেন কমতে শুরু করে, শুরু হয় অন্যান্য অসুবিধার সঙ্গে হাড়ের নানা সমস্যা। তার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে ও পেশিও দুর্বল হয়। তার সঙ্গে হাড় দুর্বল হয়ে ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয়ে হাঁটুতে ব্যথা শুরু হয়।
কখন সাবধান হবেন?
প্রথমে হাঁটু সোজা রেখে তারপর হাঁটুতে হাত রেখে মুড়লে যদি কড়মড় করে শব্দ অনুভব করেন, তাহলে সাবধান হওয়া জরুরি। একে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় প্যাল্পেবল ক্রেপিটাস| এছাড়াও আরও কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেমন- নিচে বসে থাকলে উঠতে অসুবিধা, সিঁড়িতে উঠতে অসুবিধা। যদি সমান রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে সমস্যা হয় তাহলে বুঝতে হবে অনেকটা অ্যাডভান্স স্টেজে চলে গিয়েছে আর্থ্রাইটিস।
চিকিৎসা কী?
আর্থ্রাইটিস বা হাড়ের ক্ষয় গ্রেড ওয়ান থেকে ফোর পর্যন্ত ভাগ করা হয়। প্রথম দুই পর্যায়ে ওষুধ কিংবা সাধারণ ব্যায়ামের মাধ্যমে ঠিক করা গেলেও, গ্রেড থ্রি-তে চলে এলে পা বেঁকে যায়। অসহ্য ব্যথায় অচল হয়ে যায় জীবন। এক্ষেত্রে যদি কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান তাহলে নি-জয়েন্ট রিপ্লেশমেন্টই একমাত্র স্থায়ী এবং নিরাপদ সমাধান। তবে আজকাল অনেকে এমন রয়েছেন এই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই অপারেশন করিয়ে নেন। এটা কিন্তু আবার ঠিক নয়।
সাবধানের মার নেই
১) ছোট থেকেই নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে শরীরচর্চা দরকার। নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটুন। অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান ক্ষতি বাড়ায়। ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বর্জন জরুরি।
২) এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে কাজ নয়, ওবেসিটি নিয়ন্ত্রণ করুন। শরীরের নিম্নাংশের ফ্যাট বা পেটের মেদ কমাতে হবে।
৩) মেনোপজের পর থেকে যেহেতু শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বেড়ে যায় তাই আলাদা করে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।
৪) বিশেষ করে যাঁদের এই রোগ একবার ধরা পড়ে গিয়েছে তাঁরা নিয়মিত ব্যয়াম করুন। 'ভালো হয়ে গিয়েছে'- ভেবে ব্যায়াম ছেড়ে দেবেন না। তাহলে আবার সেই আগের পর্যায়ে ফিরে যাবেন।
৫) আর খাদ্যাভ্যাসে দই, সবজি, দুগ্ধ জাতীয় খাবার রাখবেন।
