স্টাফ রিপোর্টার: এমন তো কতই হয়! জন্ম থেকে শ্বাসকষ্ট। গরিব মা-বাবা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন একরত্তিকে বুকে জড়িয়ে। ডাক্তারবাবুরা দফায় দফায় পরীক্ষা করলেন। হরেকরকম টেস্ট করলেন। শেষপর্যন্ত গম্ভীর হয়ে বললেন, এ কাজ এখানকার কম্ম নয়। বাচ্চার হার্টের দেওয়ালের একদিক থেকে অন্যদিকে ফুটো। অন্য কোথাও দেখুন। সেই অন্য কোথাও, আর কোথাও নয়। আটপৌরে বাঙালির চিরচেনা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (NRS Medical College & Hospital)। শুক্রবার দু’বছরের এমন এক শিশুর হার্টের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে যার ওজন মাত্র সাত কিলোগ্রাম। এবং শিশুটির হার্টের দেওয়ালে জন্মগত ফুটো ছিল। ঠিকমতো শ্বাস নিতে কষ্ট হত। একটু জোরে কাঁদলে বেদম হয়ে পড়ত। চিকিৎসকদের কথায়, এত কম ওজনের বাচ্চাকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা শুধু কঠিন বললে ভুল বলা হবে। রীতিমতো ঝুঁকির। যেকোনও সময় অঘটন হতে পারে।”
সত্যিই অঘটন হয়েছে। কলকাতার এই সরকারি হাসপাতালে দু’বছরের কন্যাসন্তানের অস্ত্রোপচার (Operation) হয়েছে অজ্ঞান করে। নির্দিষ্ট সময় পরে জ্ঞান ফিরেছে। স্বস্তির হাসি ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালের চত্বর ছাড়িয়ে গোটা স্বাস্থ্যভবনে। আর মেয়ে সুস্থ আছে। ভাল আছে এমনটা জানতে পেরে চোখের জল বাঁধ মানেনি দক্ষিণ দিনাজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব দম্পতির। গত মঙ্গলবার এনআরএস হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জন অধ্যাপক ডা. পরেশ বন্দ্যোপাধ্যাযের কাছে। ঠিক হয়, এদিন সকাল সাড়ে দশটায় ওপেন হার্ট সার্জারি করা হবে। অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিল ছয় সদস্যের মেডিক্যাল টিম। অধ্যাপক পরেশ বন্দ্যোপাধ্যাযের কথায়, “এত কম ওজনের বাচ্চার অস্ত্রোপচার করা অত্যন্ত ঝুঁকির। কারণ অস্ত্রোপচার চলাকালীন হার্টের কাজ বন্ধ থাকে। কৃত্রিমভাবে যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস চলে। যদি ঠিক সময়ে হার্টের কাজ শুরু না হয়-এই উদ্বেগ সবসময় থাকে। বড়দের থেকে এই অস্ত্রোপচার যথেষ্ট কঠিন। তবে আমরা পেরেছি।”
[আরও পড়ুন: শ্বাসনালীতে নাকছাবি আটকে বিপত্তি! ২৮ দিনের শিশুর প্রাণ বাঁচালো SSKM]
রীতিমতো আবেগতাড়িত এনআরএস হাসপাতালের এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত টিম। রাজ্য সরকারের ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পের আওতায় এমন জটিল, কঠিন অস্ত্রোপচার হয়েছে। করোনা আবহে এই ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ ছিল। ফের এই ধরনের অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। কিন্তু এত কম ওজনের শিশুর জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্ভবত রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে প্রথম। রাত আটটা নাগাদ ইন্টাসেভি কেয়ার ইউনিটে সুস্থ রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। শিশুটি স্বাভাবিকভাবেই আগামী দিনযাপন করতে পারবে। সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ নিখরচায় এমন অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের বক্তব্য এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখলে ভুল হবে। আগামী দিনে শিশুদের আরও জটিল অস্ত্রোপচার করতে প্রস্তুতি চলছে।