shono
Advertisement

গর্ভস্থ যমজের একজন মৃতপ্রায়, বিশেষ পদ্ধতিতে সুস্থ সন্তানকে বাঁচিয়ে নজির চিকিৎসকদের

বেশি বয়সে গর্ভধারণের কারণেই এই সমস্যা বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Posted: 09:12 AM Oct 08, 2021Updated: 09:12 AM Oct 08, 2021

অভিরূপ দাস: জন্মের আগেই আত্মাহুতি। বড়ভাইকে বাঁচাতে নিজের জীবন দিল ছোট। ঠিক যেন হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য। তবে কোনও চিত্রনাট্যকার নয় ছুঁড়ি-কাঁচিতে এই গল্প লিখলেন ডা. জয়ন্ত কুমার গুপ্ত, ডা. কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, ডা. সুমনা হক, ডা. সীতারামূর্তি পাল।

Advertisement

পূর্ব ভারতে প্রথমবার ইন্টারস্টিশিয়াল লেসার থেরাপির (Interstitial laser therapy) সাহায্যে গর্ভস্থ শিশুকে নতুন জীবন দিলেন অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটালের ডাক্তাররা। উত্তর চব্বিশ পরগনার মধ্যমগ্রামের (Madhyamgram) বাসিন্দা সুচিত্রা মাঝি (৩৫)। আইভিএফ পদ্ধতির সাহায্যে যমজ শিশু গর্ভে ধারণ করেন তিনি। আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, বেশি বয়সে গর্ভধারণের কারণে তৈরি হয় জটিলতা। পেশার কারণে আজকাল বেশি বয়সে বাবা-মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেক যুগল। স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করতে না পেরে তারা আইভিএফের সাহায্য নিচ্ছেন। যে কারণে বেড়ে গিয়েছে যমজ সন্তানের সংখ্যা। এই মুহূর্তে প্রতি পঞ্চাশজন গর্ভবতী মহিলার একজনের গর্ভে যমজ সন্তান পাওয়া যাচ্ছে, আর যমজ সন্তানবিশিষ্ট গর্ভাবস্থার ঝুঁকি সবসময় বেশি।

[আরও পড়ুন: প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি, দেবীর মুখ আঁকা, প্রতিপদে একাধিক বড় পুজোর উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রীর]

যমজ গর্ভাবস্থার ৬৬% হল ডাইকোরিয়োনিক। অর্থাৎ ২টি পৃথক ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু থেকে ভ্রূণগুলি তৈরি হয় এবং জরায়ুর মধ্যে পৃথক প্রকোষ্ঠে পৃথক রক্তপ্রবাহে পুষ্ট হয়। এমনটায় সমস্যা নেই। কিন্তু ৩৩% মনোকোরিয়োনিক। সেটাই মারাত্মক। এক্ষেত্রে মাত্র ১টি ডিম্বাণু এবং ১টি শুক্রাণু থেকেই ভ্রূণগুলি তৈরি হয় এবং জরায়ুর মধ্যে একই প্রকোষ্ঠে একই রক্তপ্রবাহে পুষ্ট হয়। এখানে সুচিত্রাদেবীর মনোকোরিয়োনিক গর্ভাবস্থার কারণে তৈরি হয় সমস্যা। সুচিত্রাদেবীর পেটে দুটো বাচ্চা। অথচ প্ল্যাসেন্টা একটাই।

ডা. কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্ল্যাসেন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা গর্ভবতী মহিলার জরায়ুতে শিশুকে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে এবং শিশুর রক্ত থেকে বর্জ্যগুলি অপসারণ করতে সাহায্য করে। সুচিত্রার দুটি শিশু কিন্তু প্ল্যাসেন্টা একটা হওয়াতে একটি শিশু সমস্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। পেটের মধ্যেই সে যদি মারা যেতো তাহলে স্বাস্থ্যবান শিশুটিও মারা পড়ত। কারণ, শরীর থেকে খারাপ রক্ত হৃষ্টপুষ্ট বাচ্চাটিকেও শেষ করে দিতো। পুরো বিষয়টি জানানো হয় সুচিত্রা দেবীকে। তিনি বলেন, একজনকে অন্তত বাঁচিয়ে দিন।

এরপরই ইন্টারস্টিশিয়াল ডায়োড লেসার থেরাপিতে একটি সূক্ষ্ম সূঁচ মায়ের জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। তা থেকে কিছু লেসার বিম বেরিয়ে রুগ্ন শিশুটির শরীরে প্রবেশ করে, ফলে তার মৃত্যু হয়। এমন করা হয় যাতে সুস্থতর যমজটিকে বাঁচানো যায়। আল্ট্রা সাউন্ডের অবিরাম সহায়তায় এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদি দুর্বল শিশুটির মধ্যে পুষ্টির অভাবের ফলে কোনও ক্লট বা কার্ডিয়াক ত্রুটি তৈরি হতো, তাহলে সেই সমস্যা প্লাসেন্টার মধ্যে দিয়ে সুস্থতর শিশুটির মধ্যে চলে যেতো।

[আরও পড়ুন: মুকুল রায়ের PAC চেয়ারম্যান পদে আইনি জটিলতা কাটাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ স্পিকার]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement