সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্কিন সফরের আগেই বড় পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ঘুষের কারবার বন্ধ রুখতে এতদিন কড়া আইন ছিল আমেরিকায়। 'ফরেন কোরাপ্ট প্র্যাকটিস অ্যাক্ট' (FCPA) নামের সেই আইন তুলে দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এর ফলে বিদেশে বাণিজ্যের জন্য ঘুষ দেওয়ার ঘটনাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই আইনেই অভিযুক্ত ছিলেন নরেন্দ্র মোদির 'ঘনিষ্ঠ' বলে পরিচিত ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানি।
১৯৭৭ সালে আমেরিকায় লাগু হয়েছিল এই এফসিপিএ আইন। যার ভিত্তিতে আমেরিকায় নথিভুক্ত কোনও সংস্থা ব্যবসা বা অন্য কোনও উদ্দেশে বিদেশি আধিকারিকদের ঘুষ দিতে পারবেন না। ঘুষ অর্থে টাকা বা কোনও দামি উপহার। যদি কেউ নিয়ম ভেঙে সেই অপরাধ করেন এবং তা প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে বিপুল টাকা জরিমানা তো বটেই, আমেরিকায় তাঁর বিচার হবে এবং কড়া শাস্তি দেওয়া হবে। প্রথমবার আমেরিকার মসনদে বসেই এই আইন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। অবশেষে নিজের দ্বিতীয় শাসনকালে এই আইনে স্থগিতাদেশ দিলেন প্রেসিডেন্ট। তাও আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরের ঠিক আগে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই আইনে এমন বহু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যা দেশের স্বার্থে সমস্যার। বিদেশে বাকিরা যে কাজ অনায়াসে করতে পারে তা এখানে করা সম্ভব নয় এই আইনের জেরে। ফলে এটা মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'শুনতে ভাল লাগলেও এটা আমেরিকার জন্য এই আইন একটি বিপর্যয়। এর জন্যই আমেরিকার সঙ্গে কেউ ব্যবসা করতে চায় না। আমেরিকার কেউ যদি বিদেশে ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রেও তদন্ত শুরু হতে পারে। যার জেরে আমেরিকার সঙ্গেও কেউ ব্যবসা করতে চান না।' বলার অপেক্ষা রাখে না ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির জন্য বড়সড় স্বস্তি। কারণ, এই আইনেই আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে আমেরিকায়। জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ ওঠে। গৌতম, তাঁর ভাইপো সাগর এবং তাঁদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রায় ২,২৩৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত আদায় করেছিল আদানিরা। ওই প্রকল্প থেকে ২০ বছর ধরে প্রায় ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মুনাফা করার পরিকল্পনা ছিল শিল্পগোষ্ঠীর। প্রকল্পের জন্য আদানি গ্রিন সংস্থা ঋণপত্রের (বন্ড) মাধ্যমে লগ্নিকারীদের থেকে প্রায় ৬৩৩৮ কোটি টাকা তুলেছিল বলেও অভিযোগ। এর মধ্যে আমেরিকার লগ্নিকারীদের থেকে ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার তোলা হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়। আমেরিকার শেয়ার বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে আদানি গোষ্ঠীকে সে দেশের সমস্ত আইন মেনে চলতে হবে। সেই কারণেই আমেরিকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ন্যায়বিচার দপ্তর ব্যবস্থা নেয় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা দায়ের হয় আমেরিকার আদালতে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন শুল্ক নীতিতে ইতিমধ্যেই নাভিশ্বাস উঠেছে বিশ্বের বহু দেশের। ভারতের উপরও শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে তাঁর শাসনে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে অম্ল-মধুর সম্পর্ক ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। আমেরিকার ২০টি পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস করেছে মোদি সরকার। তাঁরই প্রতিদান স্বরূপ মোদির বন্ধু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।