সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনী জনসভায় প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখোমুখী হয়েছিলেন তিনি। দলীয় কর্মীর ছোড়া গুলি কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর। এই হামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় সরব হন তাবড় রাষ্ট্রনেতারা। আমেরিকায় প্রতিবাদের ঝড় তোলেন ট্রাম্প সমর্থকরা। কিন্তু তখনও চুপ ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া। প্রশ্ন ওঠে, তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক কি এতটাই তলানিতে যে এমন বিপদেও স্বামীর পাশে নেই স্ত্রী? এই পরিস্থিতিতে বেশ নিরাবতা ভাঙেন ট্রাম্প-পত্নী। হিংসার বদলে ভালোবাসার পথে বেছে নেওয়ার বার্তা দেন আমেরিকানদের।
টাকার বিনিময়ে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলকে যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার মামলার পর থেকে দূরত্ব বেড়েছে ট্রাম্প ও মেলানিয়ার মধ্যে। রিপাবলিকান নেতার প্রচার থেকে শতহস্ত দূরে রয়েছেন মেলানিয়া। ফ্লোরিডায় সন্তানদের নিয়েই বেশি সময় কাটাতে দেখা যায় তাঁকে। এর মাঝেই শনিবার প্রাণঘাতী হামলার মুখে পড়েন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাবার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেন ট্রাম্পের ছেলেমেয়েরা। সোশাল মিডিয়ায় ছবি প্রকাশ করে তারা ভালোবাসা জানায়। কিন্তু তখনও চুপ ছিলেন মেলানিয়া। অবশেষে রবিবার স্বামীর উপর হওয়া হামলা নিয়ে মুখ খোলেন তিনি।
এদিন এক্স হ্যান্ডেলে বিবৃতি দিয়ে মেলানিয়া লেখেন, 'ডোনাল্ডকে যখন গুলির আঘাতে পড়ে যেতে দেখছি তখন আমার অনুভূতি কী ছিল বলতে পারব না। মনে হচ্ছিল আমার এবং ব্যারনের জীবনে ঝড় উঠতে চলেছে।' হামলাকারী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকসকে 'দানব' সম্বোধন করে ট্রাম্প-পত্নী লেখেন,' একটা দানব আমার স্বামীকে অমানবিক রাজনৈতিক যন্ত্র হিসাবে ভেবেছিল।' টমাসের গুলিতে ট্রাম্প আহত হলেও প্রাণ হারান সভায় উপস্থিত এক ব্যক্তি। আহত হন আরও দুজন। তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মেলানিয়া লেখেন, 'যে সকল পরিবার এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের জন্য ভুগছেন তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে।'
সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আমেরিকায় ৩০২টি বন্দুকবাজের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সব ঘটনায় সব মিলিয়ে ৩৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২১৬ জন। এর পর জুলাই মাসে ট্রাম্পের উপর এই হামলায় সরগরম আমেরিকা। এই আবহে, আমেরিকানদের হিংসার ঊর্ধ্বে উঠে ভালোবাসার পথে হাঁটার বার্তা দিয়ে সব শেষে মেলানিয়া লেখেন, 'আমাদের মনে রাখা উচিৎ মতামতের ভিন্নতা, নীতি, রাজনৈতিক খেলা কোনওটিই ভালোবাসার ঊর্ধ্বে নয়। আমরা সকলেই এমন একটি পৃথিবী চাই, যেখানে পারস্পরিক সম্মান, পরিবার সবার প্রথমে থাকবে। সব কিছু ভালোবাসায় ভরা থাকবে। পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করছে। যাঁরা এই খারাপ সময়ে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন, রাজনৈতিক গণ্ডি পেরিয়ে যাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ।'
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের উপর হামলার ঘটনায় হিংসার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে আমেরিকা। শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধী, সকল নেতারাই এই ধরনের হামলার বিরোধিতা করে নিন্দায় সরব হয়েছেন। নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, এক্সের কর্ণধার এলন মাস্ক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, এক্সের কর্ণধার এলন মাস্ক-সহ আরও অনেকে। 'বন্ধু' ট্রাম্পের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।